Skip to main content

Posts

Showing posts from August, 2020

কবিতা থেকে ছবি

স্বাধীন বাংলাদেশ || কাজী জহিরুল ইসলাম ||   রাগীব আহসান আর্ট কলেজে পড়েননি, ছবি আঁকায় তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, এই যে নেই, এটা যখন তাঁর মুখ থেকে শুনি তখন মনে হয়, এই ‘নেই’ আছের চেয়ে অনেক বেশি দ্যুতিময় ।  এটি আরো বেশি দ্যুতিময় হয়ে ওঠে যখন তাঁর তুলি থেকে বেরিয়ে আসা ছবিগুলোতে চোখ রাখি। তাঁর মধ্যে আমি সব সময় একটি অস্থিরতা দেখি, এই অস্থিরতা আমার মধ্যেও আছে। আমার মনে হয় এটিই সৃজনতাড়ণা।  একদিন রাগীব ভাই আমাকে ফোন করে বলেন, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কি সিদ্ধান্ত? দেশ থেকে ফিরে এসে নিয়মিত ছবি আঁকবো ।  তখন ফেব্রুয়ারি মাস। বইমেলা শুরু হয়েছে। এ বছর রাগীব আহসান ৫০টির ওপরে বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন। সেগুলো মেলায় ঘুরে ঘুরে দেখবেন, ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবেন, সম্মানীর টাকা নেবেন, ঢাকায় তো তাঁকে যেতে হবেই । আমি বলি, দারুণ খবর, একজন শিল্পী নিয়মিত ছবি আঁকবেন এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কি আছে! আমি ছবি আঁকবো কবিতার থিমের ওপর, এবং তা শুধু আপনার কবিতার।  আমি বলি, ওয়েট। আমার কবিতা? আমি কি ঠিক শুনেছি? হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন, শুধু আপনার কবিতা।   এরপর আমার আর ঘুম আসে না। কোন কবিতা থেকে কি রকম ছবি হবে এসব ভাবতে ভাবতে আমি খুশ

করোনা ঘাতক নয়

করোনা ।। কাজী জহিরুল ইসলাম।।    পুড়ছে না জ্বালানি সহস্র কোটি টন   পৃথিবীর অ্যাভেন্যুগুলোতে ; টন টন কাগজে হচ্ছে না ছাপা সভ্যতার অগ্রগতি ; ছত্রিশ হাজার গ্যালন জ্বালানি   পুড়িয়ে প্লেনের সিঁড়ি থেকে  নামছে না পরিবেশবিদ   রিও ডি জেনেরিওর বিমানবন্দরে। গরমে ঘামতে ঘামতেও   ট্রপিক্যাল দেশের ধনী লোকেরা   এসি বন্ধ করে খুলে দিয়েছে দখিনের জানালা ; পৃথিবীর আকাশে   মানুষ্য-নির্মিত কালো মেঘ নেই আজ এক ছোপ ; বাঁধাহীন বৃষ্টি ,  উড়ছে দূরন্ত মেঘ কচি বসন্তের ,  বন্যপ্রাণীরা পেয়েছে শিকারীর ভয়হীন অভয়ারণ্য ; স্বচ্ছ নীল আকাশ থেকে বহু বহুকাল পড়ে   ঝরে পড়ছে বিশুদ্ধ রোদের রেণু।   পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো আত্মশুদ্ধির আয়নায়   দাঁড়িয়ে দেখছে নিজেদের কদর্য মুখ ; উদ্বৃত্ত খাবার নিয়ে তারা বুঝি এখনই ছুটে যাবে   দূর পাহাড়ের ভূখা মানুষের দেশে। দাস-বাণিজ্যের গ্লানি   ফুটে উঠেছে শ্বেতাঙ্গ বণিকের দাম্ভিক চোয়ালে।   কারাগারের দরোজা খুলে দেবে চীন , নির্বিষ ধর্মযাজকেরা ফিরে পাবে নিরাপদ ধর্মশালা , ১২ লক্ষ শহিদের পরিবার ফিরে পাবে স্বাধীন তিব্বত ,  আশৈশব নির্বাসিত বৃদ্ধ দালাইলামা   ফিরে আসবে মাতৃভূমির পবিত্র পাথরে ; ফারাও দ্বীপে আর উল্লাস

তাদের হাতুড়ি সঙ্গীত এখনও বাজে

ঘামগ্রন্থ || কাজী জহিরুল ইসলাম ||     সমুদ্রের অববাহিকা ছিল না ছিল না নরোম কাদা সুপক্ক যবের ঢেউ এ-মানবগ্রহে লিখেছেন যারা তাদের রচিত ঘর্মাখ্যান শোনাব এখন।   তাদের হাতুড়ি সঙ্গীত এখনো বাজে   মাখঞ্জা শৃঙ্গমালায় সহস্র বর্ষের ঘামে ,  রক্তে ও ক্রোধে বা রবা টন গলে গলে উর্বরা ,  নরোম কাদা এখানে ছিল না নগর ,  দালান সারি সারি এই বিটুমিন রাস্তা ,  উঁচু-নিচু ,  মসৃণ ,  পাহাড়ি লিখেছেন আমার প্রয়াত দাদা ,  পরদাদা।   সেইসব ঘামগ্রন্থের মলিন ,  ভেজা পৃষ্ঠাগুলো আমি পড়ে শোনাব এখন। গ্রন্থের অক্ষরগুলো ভেজা ঘামে ,  রক্তে ক্রোধ আর সাফল্যের বাক্যে রচিত সকাল ব্যর্থতার যতিচিহ্ন দীর্ঘতর করেছে রাতের অন্ধকার।   হাতুড়ি ও লাঙ্গলের আঘাতে আমার পূর্বপুরুষেরা ভেঙেছে নিস্ফলা পাথরের ঘুম। স্বপ্নের উজ্জ্বল অশ্রুবিন্দু তৈরী করেছে সুবর্ণ কাদা যার নিচ থেকে টেনে তুলেছি তোমাকে হে সোনালী যবের সন্তান।   হলিসউড ,  নিউ ইয়র্ক। ১৮ মার্চ ২০২০।

ওরা বাংলা অক্ষরগুলো গভীর শ্রদ্ধায় ছুঁয়ে দেখছিল

একুশের দিন জাতিসংঘে বইমেলা || কাজী জহিরুল ইসলাম ||     আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন ছিল। দাপ্তরিক কাজ। ওটা সেরে জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল এসেম্বলি হল থেকে বের হই। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি ভিজিটরস লবিতে। তখন দুপুর বারোটা। কী আশ্চর্য, এতো মানুষ কেন এখানে? টেবিল পেতে সাজানো হয়েছে বইয়ের পশরা। নানান দেশের, নানান বর্ণের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে টেবিলগুলোর ওপর। আমি এগিয়ে যাই। এক তরুণীকে জিজ্ঞেস করি, কি হচ্ছে এখানে? তরুণী জানায়, বইমেলা। তা তো আমি দেখতেই পাচ্ছি, আজ একুশে ফেব্রুয়া রি , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, তোমরা কি এই উপলক্ষেই বইমেলার আয়োজন করেছ। তরুণী বলে, হ্যাঁ। আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, বলো তো এই দিনটি কীভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল? মেয়েটির শূন্য দৃষ্টি আমার চোখে। আমি বুঝতে পারি, ও জানে না। মেয়েটি তার বসকে ডেকে আনে। বসের নাম ডাফি, ষাট ছুঁই ছুঁই ছোটো খাটো এক নারী, গালে অসংখ্য রিংকলস, অভিজ্ঞতার প্রগাঢ় ছাপ। ডাফি একটি হালকা পাতলা ধারণা দেয়। অগুরুত্বপূর্ণ ভাষার অস্তিত্বরক্ষার প্রতিকী দিবস, এইসব বলে। আমি ওকে খুলে বলি কি হয়েছিল এই দিনে। কীভাবে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর,  আউয়াল , কিশোর

শামসুর রাহমানকে নিয়ে আমার লেখা

মগ্ন-চৈতন্যের ঘর-বাড়ি || কাজী জহিরুল ইসলাম ||     শামসুর রাহমান ,  সন্দেহ নেই ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতার সবচেয়ে নন্দিত পুরুষ। বুদ্ধদেব বসু ,  জীবনানন্দ দাশ,  অমিয় চক্রবর্তী ,  বিষ্ণু দে,  সুধীন দত্তরা রবীন্দ্রনাথকে ভেঙেচুরে বাংলা কবিতার যে নতুন সড়ক নির্মাণ করেছিলেন ,  সন্দেহাতীতভাবে সে পথেই হেঁটেছেন শামসুর রাহমান। যে পথ মাড়াতে কিছুদিন ইতস্তত করছিলেন জীবনানন্দ দাশ ,  যে পথে পা বাড়াননি জসীমউদদীনের মতো বড়ো কবি এবং কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন আহসান হাবীবও। এই অচেনা সড়কের দুপাশে একমাত্র শামসুর রাহমানই বিনা দ্বিধায় রোপণ করেছেন সবুজ গাছ-লতা। সেইসব গাছে এখন অসংখ্য পাখির কূজন। পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙে প্রতিদিন ভোরে। আধুনিক বাংলা কবিতার ব্যস্ততম মহাসড়কের দুপাশে আজ যে নয়নাভিরাম সবুজ বনানী গড়ে উঠেছে এটা শামসুর রাহমানেরই কৃতিত্ব। তাঁরই সৃষ্টি। আমাদের ছেলেবেলায় পাঠ্যপুস্তকে শামসুর রাহমানের কোনো কবিতা ছিল না। জীবিত কবিদের মধ্যে কেবল ,  যতদূর মনে পড়ে ,  নজরুল ,   জসীমউদদীন  আর সুফিয়া কামালের  কবিতা পড়েছিলাম। হাইস্কুলের শুরু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সব ক্লাসেই  ‘ নিমন্ত্রণ ’   কবিতাটি আমরা পড়েছি। স্পষ

বুদ্ধিবর্ধক কাঁঠালপাতার কদর বেড়েছে

হে কাঁঠালপাতা || কাজী জহিরুল ইসলাম ||    শুধু দামই বাড়েনি ,  বেড়েছে কদরও।   এর আগে এক শ্রেণির বিশেষ প্রাণী শুধু এর গ্রাহক ছিল এখন মনুষ্যসমাজের সবচেয়ে উঁচু স্তরের লোকেরা এর মাহাত্ম জেনে ফেলেছে এবং তাদের খাদ্য তালিকায় কাঁঠালপাতা হয়ে উঠেছে অবধারিত।   জাতির মেধাবী সন্তানেরা ,  যারা জাতির বিবেক বলেই পরিচিত ,  স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠেছে  ক্রমশ  কেননা তাদের দীর্ঘজীবন একটি জাতির সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত। বীর্যবান পুত্রদের  খাদ্য - তালিকা সমৃদ্ধ আজ তৃণপত্রে ,  বিশেষ করে   বুদ্ধিবর্ধক কাঁঠালপত্রের কদর এখন সবচেয়ে বেশি। যে কারণে নগরীর অভিজাত বাজারগুলোতে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন দোকান অধিক মুনাফার আশায় কৃষকেরা ,  ফলের জন্যে নয় পাতার জন্যে ,  তাদের ধানি জমিগুলোতে ব্যাপকহারে  হাইব্রিড কাঁঠালগাছের চাষ শুরু করেছে।   রক্তে অধিক মেদ এবং শর্করা বুদ্ধিজীবীদের কবে না ছিল কিন্তু এই ঔষধিপত্রের সন্ধান ছিল অজানা।   শহরের অভিজাত ডা ই নিং টেবিলের সুসজ্জিত মেন্যুতে এখন শুধু যে তাজা কাঁঠালপাতা পরিবেশিত হয় তাই নয় ,  কাঁঠালপাতার জুস ,  সুস্বাদু ভর্তা ,  এমন কি শুকনো পাতা গুড়ো করেও   ভাতের ওপর ছিটিয়ে সেবন করছেন প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবী