Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2020

শিল্প কী?

  আমার শিল্পভাবনা || কাজী জহিরুল ইসলাম ||   যখন থেকে, জেনে বা না জেনে, লেখালেখির সঙ্গে জড়িয়েছি, তখন থেকেই এই বিতর্কের সঙ্গেও জড়িয়ে গেছি, শিল্পের জন্য শিল্প না-কী জীবনের জন্য শিল্প। এই বিতর্কের অবসান ঘটাতে হলে শিল্প কী তা উপলব্ধি করা দরকার। আমি খুব সতর্কতার সাথে  ‘ উপলব্ধি ’  শব্দটি ব্যবহার করছি,  ‘ জানা ’  দরকার বলছি না। আমি সাধারণত বিখ্যাত মানুষের উদ্ধৃতি দিয়ে কোনো ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই না। প্রবন্ধ লেখার প্রচলিত ধারা হচ্ছে তথ্য-উপাত্ত এবং বিখ্যাতদের সংজ্ঞার আলোকে কোনো ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করা। আমি এই ধারা থেকে বের হয়েই কিছু লিখতে চাই। আমি শুধু লিখতে চাই আমার উপলব্ধির কথা। এবং এ-ও বলি, আমার উপলব্ধির যেটুকু আপনার ভালো লাগে সেটুকুই আপনি নেবেন, আমি কোনো সংজ্ঞা তৈরী করতে চাই না যা অন্যদের গ্রহন করতে হবে। তবে আমি সকল বিখ্যাত মানুষের কথাই জানতে চাই, পড়তে চাই। তারা কী লিখেছেন, বলেছেন তা জানার আগ্রহ আমার রয়েছে। আরো সুস্পস্ট করে যদি বলি, আমি সকলকেই গ্রহণ করতে চাই, কিন্তু দেবার সময় শুধু আমারটাই দেব, আমার মত করে।  মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক (সৃজনশীল এবং মননশীল) ক্ষমতা যদি একটি বোতাম টিপে বন্ধ করে

শিল্পের আগাছা

  শিল্প-সাহিত্যে গণতান্ত্রিক আগাছা || কাজী জহিরুল ইসলাম ||      অন্য দেশের ,  অন্যভাষার কথা তেমন জানি না ,  তবে বাংলা ভাষার শিল্প-সাহিত্যকে কেন্দ্র করে ,  কী ঢাকায় ,  কী কোলকাতায় ,  কী দেশের বাইরে বাঙালি অধ্যুষিত পরবাসে ,  সর্বকালেই একদল  ‘ টাউট ’  গড়ে উঠেছে ,  এখনও তাদের সরব উপস্থিতি রয়েছে। শিল্প একটি নীরব মাধ্যম ,  উপলব্ধির ,  বোধের গভীরে ধারণ করার বিষয়। এর সরাসরি প্রভাব সমাজে দেখা না গেলেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব খুব ব্যাপক।  ইংরেজ কবি পিবি শেলির ভাষায় ,  কবিরা পৃথিবীর অস্বীকৃত আইন প্রণেতা।  কিন্তু শিল্প-সাহিত্যের টাউটগণ এই নীরব বিষয়টিকে সর্বকালেই সরব রাখেন ,  তারাই শিল্প-সাহিত্যের মাঠ গরম করে রাখেন সব সময়। এই গরম রাখাকে তো ইতিবাচকভাবেই দেখতে হবে ,  নাকি ?  যদি তারা শিল্প-সাহিত্যের মাঠ গরম না রাখতেন তাহলে অনেক কম মানুষ এর সঙ্গে জড়িত হত ,  অনেক কম মানুষ এর পৃষ্ঠপোষকতা করত ,  এবং আমরা অনেক প্রতিভাকেই হয়ত পেতাম না! তো যারা এই মহৎ কাজটি করছেন তাদের জন্য  ‘ টাউট ’  এর মত একটি নেতিবাচক বিশেষণ কেন তৈরী হলো ?  যারা লিখতে পারেন না বা লিখেন না ,  গাইতে পারেন না বা গান করেন না ,  আঁকতে পারেন না বা

ঊনিশ সালের জন্মদিনে মুক্তির জন্য লেখা

  শুভ জন্মদিন মুক্তি জহির কাজী জহিরুল ইসলাম  বাঙালিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর ১৯৭১। এ বছর সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ পেয়েছে সাড়ে সাত কোটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি। ভীতি এবং স্বপ্নের ভেতরে অঙ্কুরোদ্গম ঘটেছে একঝাঁক শিশুর। বাংলাদেশের সমান বয়েসী সেইসব শিশুরা আজ পৃথিবীর নানান ভূখণ্ডে ছড়িয়ে আছে ,  প্রতিভার উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করছে পৃথিবীকে। সেইসব শিশুদের একজন মুক্তি। ১৯৭১ সালের এইদিনে ,   ১০ সেপ্টেম্বর ,   মুক্তি জন্মগ্রহণ করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে পড়তেই আমার সাথে দেখা, পরিচয় এবং বিয়ে। এরপরে দেশে-বিদেশে পড়াশোনা, নানান প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রচনা করেছে এক অনিন্দ্য সুন্দর সংসার, যার পুরো কৃতিত্বই মুক্তির। মুক্তি যখন আমার পাশে থাকে নিজেকে মনে হয় রাজা, ও যখন দূরে থাকে তখন মনে হয় আমি বড় অসহায়। আমি অনেক ভালো বক্তাকে দেখেছি স্ত্রী উপস্থিত থাকলে আর কথা বলতে পারেন না। আমার বেলায় হয় তার উল্টো, মুক্তি উপস্থিত থাকলে আমার সাহস এবং স্বতস্ফূর্ততা দুই-ই থাকে তুঙ্গে। আমি তখন কথা বলি দ্

জীবনের চেয়ে সম্পদের প্রতি প্রেম বেশি

ঢাকার দালানকোঠা    || কাজী জহিরুল ইসলাম || কাশফুলশুভ্র ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি ,  এক মোটাসোটা বুড়ো ,  হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়লো। নভো চিৎকার করছে ,  বাবা ,  বাবা ,  দেখো কে যেন এসেছে। আমি ওপরে ,  ব্যাগ গোছাচ্ছি ,  সকালে ফ্লাইট। নভোর চিৎকারে ছুটতে ছুটতে ওককাঠের সিঁড়িতে ঝড় তুলে নিচে নামি। দুই মেয়ে নিচে ,  অচেনা কেউ ঘরে ঢুকে পড়েছে ,  কী সাংঘাতিক কথা। দরোজায় লক না থাকলেও চাইম অন করা ছিল ,  নারীকন্ঠ বেজে উঠে জানিয়েছিল ,  সদর দরোজা খোলা হয়েছে। নিচে নেমে দেখি ,  জ্যাকব ,  আমার প্রতিবেশী ,  জুইশ বুড়ো। শেষবার ও এসেছিল বছর পাঁচেক আগে। তখন ওর দাঁড়ি ছিল না। জ্যাকব দুই হাত জোড় করে এভাবে ঢুকে পড়ার জন্য ক্ষমা চাইল। এরপর আমাকে টেনে ওর মুখের কাছে নিয়ে বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো ,  আমি খুব বিপদে পড়েছি। হানা আমাকে কিছুতেই ব্যাকইয়ার্ডে যেতে দিচ্ছে না।  আমার ব্যকইয়ার্ডে একটি ডালপালায় বিস্তৃত সুবিশাল শতবর্ষী ওক গাছ আছে। ওর কিছু ডাল প্রতিবেশীদের বাড়িতেও ছায়া দেয়। দুদিন আগে নাকি সেই বৃক্ষের একটি মরা ডাল জ্যাকবের উঠোনে ভেঙে পড়েছে। আবার যদি পড়ে ,  এই ভয়ে ওর স্ত্রী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ও যেন আর ব্যাকইয়ার্ডে না যায়। ওর উৎকন্ঠিত

অসাধারণ এই শিল্পীর জীবনের গল্প বড় করুণ

  [এই সময়ের অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী সারফুদ্দিন আহমেদ। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। আর্ট কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ,  আর শুধু ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান বিষয়ের ছবি। সারফুদ্দিন আহমেদের ছবি থেকে চোখ ফেরানো যায় না ,  আপনাতেই ওঁর নান্দনিক সৃষ্টিকর্মে দৃষ্টি আটকে যায় ,  কী জল রঙ ,  কী অ্যাক্রিলিক ,  কিংবা স্রেফ পেন্সিলের ড্রয়িং। এই গুণী শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি এখানে উপস্থাপন করা হলো।]       ভারত আমাকে চোখ দিয়েছে ,  বাংলাদেশ দিয়েছে দৃষ্টি -     সারফুদ্দিন আহমেদ     কাজী জহিরুল ইসলামঃ  ব্যাক গ্রাউন্ডে তবলা বাজছে আপনি ছবি আঁকছেন কাচের ওপর।    এই যে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ছবি আঁকা, এই ছন্দটা ছবিতে কিভাবে ধরেন? আর কোনো শিল্পী ছবি  আঁ কার সময় যন্ত্রানুসঙ্গ ব্যবহার করেছেন?   সারফুদ্দিন আহমেদঃ   কাঁচ নয়,   এটি এক বিশেষ ধরনের কাপড়-নেট। এই নেটের উপরে বর্তমানে আমার এক্সপেরিমেন্ট চলছে।    জহিরুলঃ ও ,  ফেইসবুকে যখন ছবিটি দেখি কাচের মতো লাগছিল। সারফুদ্দিনঃ  আমি বেশির ভাগ সময় গান শুনতে শুনতে ছবি আঁকি । শুরুতে গানের কথা এবং সুর কানে আসলেও পরে কেবল সুরটাই আমাকে ছবি আ