Skip to main content

করোনা ঘাতক নয়

করোনা

।। কাজী জহিরুল ইসলাম।। 

 

পুড়ছে না জ্বালানি সহস্র কোটি টন পৃথিবীর অ্যাভেন্যুগুলোতে;

টন টন কাগজে হচ্ছে না ছাপা সভ্যতার অগ্রগতি;

ছত্রিশ হাজার গ্যালন জ্বালানি পুড়িয়ে প্লেনের সিঁড়ি থেকে 

নামছে না পরিবেশবিদ রিও ডি জেনেরিওর বিমানবন্দরে।

গরমে ঘামতে ঘামতেও ট্রপিক্যাল দেশের ধনী লোকেরা 

এসি বন্ধ করে খুলে দিয়েছে দখিনের জানালা;

পৃথিবীর আকাশে মানুষ্য-নির্মিত কালো মেঘ নেই আজ এক ছোপ;

বাঁধাহীন বৃষ্টিউড়ছে দূরন্ত মেঘ কচি বসন্তের

বন্যপ্রাণীরা পেয়েছে শিকারীর ভয়হীন অভয়ারণ্য;

স্বচ্ছ নীল আকাশ থেকে বহু বহুকাল পড়ে ঝরে পড়ছে বিশুদ্ধ রোদের রেণু।

 

পৃথিবীর পরাশক্তিগুলো আত্মশুদ্ধির আয়নায় দাঁড়িয়ে দেখছে নিজেদের কদর্য মুখ;

উদ্বৃত্ত খাবার নিয়ে তারা বুঝি এখনই ছুটে যাবে 

দূর পাহাড়ের ভূখা মানুষের দেশে।

দাস-বাণিজ্যের গ্লানি ফুটে উঠেছে শ্বেতাঙ্গ বণিকের দাম্ভিক চোয়ালে।

 

কারাগারের দরোজা খুলে দেবে চীন,

নির্বিষ ধর্মযাজকেরা ফিরে পাবে নিরাপদ ধর্মশালা,

১২ লক্ষ শহিদের পরিবার ফিরে পাবে স্বাধীন তিব্বত

আশৈশব নির্বাসিত বৃদ্ধ দালাইলামা ফিরে আসবে মাতৃভূমির পবিত্র পাথরে;

ফারাও দ্বীপে আর উল্লাসে মেতে উঠবে না নিষ্ঠুর ডলফিন-ঘাতকেরা;

দূরন্ত ষাঁড়ের দেহ খুঁচিয়ে হত্যা করে যে ম্যাটাডোর

বীরত্বের বদলে আজ সে 

নিজের কাপুরুষত্বের জন্য লজ্জায় ঢাকে মুখ 

মাদ্রিদের অস্তগামী লাল সূর্যের নিচে। 

 

প্রিয়তমা স্ত্রীর কথা ভুলে যে স্বামী মেতেছিল পরকিয়ায়

ক্যারিয়ার-নেশায় সন্তানের মুখ বিস্মৃত যে নারীর

আজ তারা সকলেই ফিরেছে ঘরে,

উপাসনালয়ের চেয়ে পবিত্র যে পরিবার সেখানেই তারা হয়েছে থিতু।

 

শত্রু-মিত্র ভুলেসকলেই হাত তুলে 

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় নতজানু,

"প্রত্যেকে মোরা পরের তরে" হয়ে উঠছে পৃথিবীর প্রধান স্লোগান।

আকাশের পাখির দিকেঅরণ্যের পশুর দিকে

সমুদ্রের মাছের দিকে তাকিয়ে আজ মানুষ উপলব্ধি করছে

ওরা আমাদেরই সহোদর।

 

প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হে মানুষদেখো

যে পৃথিবীকে তুমি দিনের পর দিন বিষপ্রয়োগে করেছ অসুস্থ

আজ সে একটু একটু করে সেরে উঠছেশুদ্ধ হচ্ছেসুস্থ হয়ে উঠছে।

 

নানাকরোনা ঘাতক নয়নয় কোনো অভিশপ্ত জীবাণু

প্রকৃতির তৈরি এক মহৌষধ এই করোনা ফুল

অসুস্থ পৃথিবীকে সুস্থ করে তোলার দাওয়াই

 

হলিসউডনিউইয়র্ক। ১ এপ্রিল ২০২০।

Comments

Popular posts from this blog

অসাধারণ এই শিল্পীর জীবনের গল্প বড় করুণ

  [এই সময়ের অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী সারফুদ্দিন আহমেদ। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। আর্ট কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ,  আর শুধু ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান বিষয়ের ছবি। সারফুদ্দিন আহমেদের ছবি থেকে চোখ ফেরানো যায় না ,  আপনাতেই ওঁর নান্দনিক সৃষ্টিকর্মে দৃষ্টি আটকে যায় ,  কী জল রঙ ,  কী অ্যাক্রিলিক ,  কিংবা স্রেফ পেন্সিলের ড্রয়িং। এই গুণী শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি এখানে উপস্থাপন করা হলো।]       ভারত আমাকে চোখ দিয়েছে ,  বাংলাদেশ দিয়েছে দৃষ্টি -     সারফুদ্দিন আহমেদ     কাজী জহিরুল ইসলামঃ  ব্যাক গ্রাউন্ডে তবলা বাজছে আপনি ছবি আঁকছেন কাচের ওপর।    এই যে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ছবি আঁকা, এই ছন্দটা ছবিতে কিভাবে ধরেন? আর কোনো শিল্পী ছবি  আঁ কার সময় যন্ত্রানুসঙ্গ ব্যবহার করেছেন?   সারফুদ্দিন আহমেদঃ   কাঁচ নয়,   এটি এক বিশেষ ধরনের কাপড়-নেট। এই নেটের উপরে বর্তমানে আমার এক্সপেরিমেন্ট চলছে।    জহিরুলঃ ও ,  ফেইসবুকে যখন ছবিটি দেখি কাচের মতো ...

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা || আবুল কাইয়ুম

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা: জাতীয়-বৈশ্বিক মেলবন্ধন   || আবুল কাইয়ুম ||    কবি যদি হন বিশ্বপরিব্রাজক ,  তবে তিনি তো কবিতায় আঁকবেন তাঁর দেখা দুনিয়ার ছবি। বৃহত্ত্বকে আশ্লেষ করার পরিণামে স্বাভাবিকভাবে তাঁর মধ্যে জন্ম নেবে মানবিক মহত্ত্ববোধ ,  তা যে কাব্যাদর্শের লাঠিতে ভর করেই হোক। আশির দশক থেকে ক্রমবিকশিত কবি কাজী জহিরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি । পর্যাপ্ত বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতায় আলোকিত হয়েছেন বলেই তিনি যে কোনো সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে নিজেকে উদারনৈতিক মানবিক চৈতন্যে সংগঠিত করতে পেরেছেন ,  বিশ্বমানবতা ও বিশ্বশান্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত রেখেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে জড়ো হয়েছে বৃহত্তর সমষ্টিচেতনা ,  তাঁর প্রেম ও প্রার্থনা মানব কল্যাণের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে। তার লেখনীতে নানা দেশের মানুষের জীবন ,  সংস্কৃতি ,  প্রেম ,  ত্যাগ ও সংগ্রামের চালচিত্র কীভাবে উঠে এসেছে তা তাঁর কবিতার সংস্পর্শে না এলে বোঝা যাবে না। তাঁর  ‘ এল সালভাদর ’  শীর্ষক কবিতার কথাই ধরা যাক। এই অত্যুজ্জ্বল কবিতার মাত্র কয়টি বিস্ময়কর পংক্তিই শুধু এখানে তুলে ধরছি-    হণ্ডু...

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমো...