Skip to main content

শামসুর রাহমানকে নিয়ে আমার লেখা

মগ্ন-চৈতন্যের ঘর-বাড়ি

|| কাজী জহিরুল ইসলাম ||  

 

শামসুর রাহমানসন্দেহ নেই ত্রিশোত্তর বাংলা কবিতার সবচেয়ে নন্দিত পুরুষ। বুদ্ধদেব বসুজীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তীবিষ্ণু দে, সুধীন দত্তরা রবীন্দ্রনাথকে ভেঙেচুরে বাংলা কবিতার যে নতুন সড়ক নির্মাণ করেছিলেনসন্দেহাতীতভাবে সে পথেই হেঁটেছেন শামসুর রাহমান। যে পথ মাড়াতে কিছুদিন ইতস্তত করছিলেন জীবনানন্দ দাশযে পথে পা বাড়াননি জসীমউদদীনের মতো বড়ো কবি এবং কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন আহসান হাবীবও। এই অচেনা সড়কের দুপাশে একমাত্র শামসুর রাহমানই বিনা দ্বিধায় রোপণ করেছেন সবুজ গাছ-লতা। সেইসব গাছে এখন অসংখ্য পাখির কূজন। পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙে প্রতিদিন ভোরে। আধুনিক বাংলা কবিতার ব্যস্ততম মহাসড়কের দুপাশে আজ যে নয়নাভিরাম সবুজ বনানী গড়ে উঠেছে এটা শামসুর রাহমানেরই কৃতিত্ব। তাঁরই সৃষ্টি। আমাদের ছেলেবেলায় পাঠ্যপুস্তকে শামসুর রাহমানের কোনো কবিতা ছিল না। জীবিত কবিদের মধ্যে কেবলযতদূর মনে পড়েনজরুল, জসীমউদদীন আর সুফিয়া কামালের কবিতা পড়েছিলাম। হাইস্কুলের শুরু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সব ক্লাসেই নিমন্ত্রণ’  কবিতাটি আমরা পড়েছি। স্পষ্ট মনে আছে আমি কোনো ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকেই অন্তমিল বর্জিত কোনো কবিতা পড়িনি। অন্তমিল ছাড়াও যে কবিতা হয় এটা বুঝতে বোধ করি আমাদের শিক্ষা বিভাগের কর্তাব্যক্তিদেরও সময় লেগেছিল প্রায় অর্ধ-শতাব্দী। শামসুর রাহমানের মতো বড়ো কবিকেও পঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আর এই অন্তর্ভুক্তির লোভে তিনি কখনোই পেছন ফিরে তাকাননি। অনুসরণ করেননি রবীন্দ্রনাথনজরুল কিংবা জসীমউদদীনের পদাঙ্ক। আধুনিক কবিতার যে বিশুদ্ধ আঙ্গিক তিনি রপ্ত করেছিলেন, তা থেকে বিচ্যুত হননি কখনোই। আমৃত্যু তিনি সে পথেই হেঁটেছেন। অক্ষরবৃত্ত ছন্দে শুদ্ধ পয়ার রচনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। এরশাদের শাসনামলেই সম্ভবত সর্বপ্রথমআশির দশকের গোড়ার দিকেস্কুল কারিকুলামের পাঠ্যপুস্তকে আধুনিক কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখনই সারা দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকের সাথে ব্যাপক পরিচয় ঘটে শামসুর রাহমানআল মাহমুদসৈয়দ আলী আহসান ও ফজল শাহাবুদ্দীনের কবিতার। যখন স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবৃত্তি হতে শুরু করে, ‘স্বাধীনতা তুমি রবি ঠাকুরের অজর কবিতা অবিনাশী গান। স্বাধীনতা তুমি কাজী নজরুল ঝাকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষসৃষ্টি সুখের উল্লাসেকাঁপা’ মূলত তখনই এদেশের শিল্পরসিক মানুষ টের পায় আধুনিক কবিতার শক্তি। গণমানুষের সঙ্গে আধুনিক বাংলা কবিতার যেটুকু আত্মীয়তাযেটুকু যোগাযোগতাও শামসুর রাহমানেরই অবদান। তাঁর সমস্ত কবিতার মূল সুরটিই হলো দেশপ্রেম। শামসুর রাহমান কখনোই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। এমন একটি সামাজিক ইস্যু নেই যেটি তাঁকে স্পর্শ করেনিযা নিয়ে তিনি কবিতা লেখেননি। আসাদের শার্ট’, ‘স্বাধীনতা তুমি’, ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ যেমন আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক বড়ো ইস্যুর ওপর লেখা তেমনি তাঁর অসংখ্য কবিতা আছে যেগুলো ছোটো ছোটো সামাজিক ও পরিবেশ আন্দোলনের ওপর লেখা। একজন বিপ্লবীর স্ত্রীর পায়ে পায়ে হাঁটে শঙ্কাঅমঙ্গলের আশঙ্কায় বারবার কেঁপে ওঠে বুক। সেই শঙ্কার ধুকপুকানি প্রতিধ্বনিত হয় তাঁর কবিতায়।




আশির দশকের মাঝামাঝি এক সময়। ফেব্রুয়ারি মাস। বইমেলার মাস। গুলশান থেকে বাদুড়ঝোলা হয়ে ৬ নম্বর বাস ধরে আসি ফার্মগেইট। সেখান থেকে আরেক বাসে শাহবাগ। তারপর হাঁটা। সে-কি উন্মাদনা। মেলায় যাব। বই কিনব। কার বই কিনবকার আবারশামসুর রাহমানের। বইয়ের নাম অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই। এই প্রথম আমি শামসুর রাহমানের বই কিনি। প্রতিটি কবিতা বারবার পড়িবহুবার পড়ি। পড়তে পড়তে মুখস্থ করে ফেলি। তখন থেকেই শামসুর রাহমানের কবিতার সাথে আমার সখ্য। কিন্তু তাঁকে জানতে হলে পেছনের কবিতাগুলোও যে পড়তে হবে। পড়তে শুরু করি।

পড়ি আর শিহরিত হই। নজরুলের পরে আর কে লিখেছে এমন শক্ত দেশের পঙক্তিএকবার কবি, ছড়াকার ফয়েজ আহমদ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘শামসুর রাহমানকে বলেছিলামআসাদের শার্টের মতো কবিতা লিখতে। এর পরে যা লিখেছে তা আর স্পর্শ করে না।’ হয়তো ফয়েজ ভাই আসাদের শার্ট’ কবিতাটিতে বড়ো বেশি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বলেই ওটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।

আসাদের রক্তাক্ত শার্ট যেমন হয়ে উঠেছিল তখন আন্দোলনের অবধারিত মেনিফেস্টো, ‘আমাদের প্রাণের পতাকা’ ঠিক তেমনি আমাদের চেতনায় আসাদের শার্ট গেঁথে দিয়েছেন কবি শামসুর রাহমান এই কবিতাটি রচনা করে। আসাদের শার্ট এখন বাঙালি জাতীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ইমোশোনাল এবং ইন্টেলেকচুয়াল রিসোর্স।

১৯৯৯ সালে হঠাৎ এক মৌন সন্ধ্যায় হাজির হই কবির শ্যামলীর বাড়িতে। সাথে ছিলেন বগুড়ার কবি ফিরোজ আহমদ। এমন সুপুরুষ আমার জীবনে খুব কম দেখেছি। কী অমায়িক ব্যবহার। নানান অনুষ্ঠানাদিতে তাঁর সঙ্গে বহুবার দেখা হয়েছেকথা হয়েছেকিন্তু এমন ঘরোয়া পরিবেশে কবি শামসুর রাহমানের সাথে আর কখনোই আমার আলাপ হয়নি। আমি নুয়ে পড়ে তাঁর পা ছুঁয়ে সালাম করি। এই কাজটি আমি সাধারণত করি না। কিন্তু এই মানুষটির অসাধারণ ব্যক্তিত্বের কাছে আমার মাথা আপনা থেকেই নত হয়ে এলো। কবিতা নিয়ে কিছু কথা হলো। মূলত তরুণদের কবিতা নিয়ে তার কী ভাবনা এই বিষয়েই বেশি কথাবার্তা হলো। তিনি তরুণদের কবিতা সম্পর্কে বেশ আশাবাদ ব্যক্ত করলেও তেমন উচ্ছাস প্রকাশ করলেন না। সাধারণত শামসুর রাহমান কখনোই কোনো বিষয়ে খুব উচ্ছসিত হতেন না। কিংবা তার উচ্ছ্বাস বোঝা যেত না। এর কদিন আগেই রামপুরার এক ছেলে (কোনো একটি মৌলবাদী দলের সদস্য) তাঁকে হত্যা করতে তার বাসায় যায়। ভেবেছিলাম তিনি এতে বিচলিত এবং কারও সঙ্গে কথা বলতে বিব্রত হবেন হয়তো। কিন্তু তাঁর আচরণে বিব্রতবোধের লেশমাত্রও ছিল না। তিনি খুব সহজ এবং স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বললেন। চা এলোবিস্কুট এলো। আমরা একসঙ্গে চা খেলাম। আমি তাঁকে আমন্ত্রণ জানালাম আমার সম্পাদিত পত্রিকা কাজীর কাগজ’-এর প্রথম সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচন করার জন্য। তিনি সানন্দে রাজি হলেন।

১৩ মার্চ ১৯৯৯। সকাল দশটা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ছোট্ট অডিটোরিয়ামটি লেখক-কবিদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। ভাবতেই পারিনি এত লেখক-কবির সমাগম হবে। আজ কবি আনওয়ার আহমদের ৫৮তম জন্মদিন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজনরূপমকিছুধ্বনি-র সম্পাদক ও কবি আনওয়ার আহমদ আজ আর বেঁচে নেই। আমি কাজীর কাগজ’-এর প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশ করেছিলাম আনওয়ার আহমদের ওপর। দেশের প্রায় সব খ্যাতিমান লেখক-কবিই সেই সংকলনে লিখেছিলেন। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি কখন আসবেন তিনি। আমাদের পথপ্রদর্শক। কবি শামসুর রাহমান। যেহেতু অনুষ্ঠানটির আয়োজক কাজীর কাগজ’, কাজেই আমি ব্যস্ত এর সকল আয়োজনের তদারকিতে। এক পর্যায়ে আনওয়ার ভাইকে জিজ্ঞেস করলামএত লোক কীভাবে এলোআনওয়ার ভাই তার চিরাচরিত ঝাঁঝালো গলায় বললেনখবর তো রাখো না। ১৩টা কাগজে নিউজ এসেছে। তখনি ফিরোজ আহমদ কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করলেন। আমরা অনুষ্ঠান শুরু করলাম। মঞ্চে পাশাপাশি বসা কবি শামসুর রাহমানকবি কায়সুল হক, কবি আনওয়ার আহমদশিল্পী বীরেন সোম ও আমি। অনুষ্ঠান শুরু হলো কবি শামসুর রাহমানের উদ্বোধনী বক্তৃতা ও কাজীর কাগজের মোড়ক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে। তিনি আনওয়ার আহমদের দীর্ঘজীবন কামনার পাশাপাশি সম্পাদক হিসাবে তার সাফল্যের কথা বললেন। কবি আনওয়ার আহমদ সম্পর্কে বললেন, ‘একসময় মনে হয়েছিল আনওয়ার কবিতা লিখতে পারবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ও কবি হয়ে উঠেছে আহমদ ছফা অডিটোরিয়ামের দরজা পর্যন্ত এসে আবার অ্যাবাউট টার্ন করে চলে গেলেন। আমি কানে কানে আমার পাশে বসা আনওয়ার ভাইকে জিজ্ঞাস করলাম, ব্যাপার কীতিনি বললেনশামসুর রাহমানের সাথে সমস্যা আছে। একে একে প্রায় ২৫ জন লেখক কবি কক্তৃতা করলেন। সবশেষে ফিরোজ আহমদ যখন আমার নাম ঘোষণা করলেনআমি উঠে মাইকের সামনে গিয়ে কবি শামসুর রাহমানকে দ্বিতীয়বারের মতো বক্তৃতা করতে আমন্ত্রণ জানালাম। এতে তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করলেন বলে মনে হলো। ইতস্তত করতে করতে তিনি উঠলেন এবং মাইকের সামনে গিয়ে হেসে ফেললেন। তিনি বললেন, ‘আমি এতক্ষণে বুঝতে পেরেছি কাজীর কাগজের সম্পাদক আমাকে কেনো দ্বিতীয়বার বক্তৃতা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আসলে আমার একটা মস্তবড়ো ভুল হয়ে গেছে। আমি প্রমবার সদ্য প্রকাশিত এই কাগজটি সম্পর্কে প্রায় তেমন কিছুই বলিনি। সম্পাদককে ধন্যবাদ জানাই তিনি আমাকে ভুলটি সংশোধনের সুযোগ করে দেবার জন্য।’ এরপর তিনি কাজীর কাগজ সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেন। মূলত প্রশংসাই করেন। এবং তিনি এ-ও বলেন, ‘এটি একটি ইতিহাস। এর আগে আমি আর কখনোই দেখিনি একজন কবির জন্মদিনে একটি কাগজ প্রকাশিত হয়েছে।



রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন“সহজ কথা কইতে আমায় কহ যে / সহজ কথা যায় না বলা সহজে” কবি শামসুর রাহমান সেই সহজ কথারসহজ শব্দাবলির এক দক্ষ কারিগর হয়ে উঠেছিলেন খুব কম বয়সেই। অত্যন্ত সহজ শব্দাবলিতে তিনি অবিরাম পয়ার রচনার এক দুর্লভ কৌশল রপ্ত করে নিয়েছিলেন। তাঁকে যতবারযে অবস্থাতেই দেখেছি সবসময়ই মনে হয়েছে তিনি একটা ঘোরের মধ্যে ডুবে আছেন। সেই ঘোর কবিতার ঘোর। কবিতা-ই ছিল তাঁর চৈতন্যের ঘর-বাড়ি। তাঁকে কখনোই কবি ছাড়া আর অন্য কোনো কিছু মনে হয়নি। যখনই দেখি মনে হয় তিনি সেই অমিয় ঘোরের মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। কাব্যদেবী তার রেশমি শুভ্র চুলে বিলি কাটছে। তিনি এক্ষুনি কাগজ-কলম নিয়ে বসে পড়বেন। বাংলা সাহিত্যে যোগ হবে আরও একটি অসাধারণ কবিতা। তাঁর চিন্তার বাগানে কবিতা ছাড়া আর অন্য কোনো স্বপ্নের বীজ প্রোথিত হয়নি।

তার অন্তিম ইচ্ছাটিও এটিই ছিল। আরও একটি পঙক্তি রচনার ইচ্ছা। অন্তিম শয়ানেও তিনি মাঝে-মাঝেই অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলতে চাইতেন। ইশারায় কাগজ-কলম চাইতেন রোগশয্যাপাশে শুশ্রুষারত প্রিয়জনদের কাছে কবিতা লিখবার জন্য। শামসুর রাহমানের কবিতা আমাদের জন্য বিশ্বভ্রমণের একটি বিস্তৃত জানালা খুলে দেয়। আমরা ঘুরে আসতে পারি লোর্কার স্পেনআরব্যরজনীর মরূদ্যানসহ সমগ্র বিশ্ব

সমস্ত পৃথিবী ঘুরে ঘুরে যখনই কবির চেতনায় উদিত হয় অন্তিম শয়ানের কথা, তখন অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো মস্তিষ্কের কোষে কোষে জ্বলে ওঠে স্বদেশের মুখ না দেখে প্রস্থানের কষ্ট আমরা স্পষ্টতই বুঝতে পারি যে মুখ না দেখে তিনি মরতে চান নাসেই প্রিয় মুখের নাম বাংলাদেশকবির প্রিয়তম স্বদেশ। এভাবেই কবি শামসুর রাহমান বার বারহাজার বার জানান দিয়েছেন তাঁর কবিতার শব্দের হৃদয়ে প্রোথিত দেশপ্রেমের চিরায়ত-শাশ্বত বাণী। কবির মৃত্যুর অব্যবহিত পরে জাতীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত নাগরিক শোকসভায় সৈয়দ শামসুল হক যথার্থই বলেছেনকবি শামসুর রাহমান আমাদের স্বাধীনতার কবি। শামসুর রাহমান শুধু সমসাময়িক ও রাজনৈতিক ইস্যুর ওপর কবিতা লিখে চুপচাপ বসে থাকেননিপ্রতিটি চলমান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় দিয়েছেন সবসময়ই। এইখানেই কবি শামসুর রাহমান আর সকলের চেয়ে আলাদা। আর তখনই তিনি হয়ে যান আমাদের হৃদয়ের কবিআমাদের প্রাণের মানুষ। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করিতিনি আমাদেরই একজন।

 

[রচনাকাল ১৮ আগস্ট ২০০৬] 

Comments

Popular posts from this blog

শিল্পী কাজী রকিবের সাক্ষাৎকার

নন-একাডেমিক শিল্পীরাই নতুন কিছু দেয় -    কাজী রকিব  [কাজী রকিব বাংলাদেশের একজন গুণী শিল্পী। রাজশাহী আর্ট কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক। কলেজের প্রথম ক্লাসটি নেবার কৃতিত্বও তাঁর। নিরন্তর ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান ভাবনার ছবি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সস্ত্রীক বসবাস। তার স্ত্রী মাসুদা কাজীও একজন গুণী শিল্পী। বৈচিত্রপ্রিয় এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ধারাবাহিকভাবে তা এখানে প্রকাশ করা হবে। আজ উপস্থাপন করা হলো প্রথম পর্ব।]   জহিরুলঃ  বেশিরভাগ শিল্পীই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেন ,  নিজস্বতা যাকে আমরা বলি। আবার কেউ কেউ একই ধরণের ছবি বারবার আঁকেন। আপনার কাজে বৈচিত্র খুব বেশি ,  এতে করে "টাইপড" অপবাদ থেকে আপনি মুক্ত কিন্তু নিজের একটি স্টাইল তৈরি করতে না পারা বা তৈরি হয়নি বলে কি আক্ষেপ হয় ,  নাকি এই যে ভার্সেটিলিটি এটাই আপনি বেশি উপভোগ করেন ?    রকিবঃ   আমি আসলে আলাদা করে ভাবিনি এই স্টাইল বিষয়ে। কারো মতো আঁকারও চেষ্টা করিনি তেমন ভাবে। অল্প বয়সে ,  আমার ১৯ / ২০ বছর বয়সে ,  সালভাদর দালির মতো আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন ।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে এবং সংশোধনী প্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার - তৃতীয় পর্ব

মঞ্জু আমার ওপর রাগ করেছে                                                           - আল মাহমুদ [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের  তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]  সাক্ষাৎকার নেবার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু  ও কাজী জহিরুল ইসলাম। ওয়ান্টাগ পার্ক, নিউ ইয়র্ক।  ছবি তুলেছেন ড. মাহবুব হাসান।   জহিরুলঃ  খুশবন্ত সিং তার সকল বই অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি দিলেন আপনাকে এবং সেই অনুমতিপত্রটি তিনি নিজ হাতে আপনার সামনেই বাংলায় লিখে দিলেন। তিনি কিভাবে বাংলা শিখলেন তা কি জানতে পেরেছিলেন ?  মঞ্জুঃ    জ্বি ,  ঘটনাটি  ঘটে  ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ,  এ সম্পর্কে আমি আগের এক প্রশ্নে বলেছি। তারিখটি আমার স্মরণে নেই। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ,  ডিসেম্বরের শেষ দিকে। না ,  বাংলায় নয় ,  উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। আমার কফি পানের সময়ের মধ্যেই লিখে দিয়েছেন। ১৯৮৪ থেকে মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমাকে তিনটি বা চারটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন বলতে আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রতিটি চিঠি ইংরেজিতেই লিখেছেন। প্রতিটি চিঠিতে আমাকে সম্বোধন করেছেন  “ আনোয়ার ভাই ,”  বলে।