Skip to main content

তিনি সাধারণের বাইরের মানুষ

 আমার দেখা কাজী  জহিরুল ইসলাম 

|| ড. আশরাফ আহমেদ ||




 

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম , বাপ-মা , ঘনিষ্ঠ স্বজনদের প্রিয় বাদল একজন চমৎকার মনের মানুষ । নির্ভেজাল, খাঁটি, আলোকিত মন ও মননের অধিকারী দয়ালু চিত্তের মানুষটি তাঁর ৫৩তম জন্মবার্ষিকী উৎসর্গ করেছিলেন সে-সময়ে ভীষণ অসুস্থ ফটো সাংবাদিক স্বপন হাইয়ের জন্য। স্বপন হাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন) কিন্তু মানবিকতার সুন্দর উদাহরণ দেখে নিশ্চয়ই আনন্দিত হয়ে গেছেন। কবি জহিরের অনুরোধে জন্মদিনে উপহারের বদলে স্বপন হাইয়ের চিকিৎসা তহবিলে দানের যে অনন্য মানবিক উদাহরণ কবি জহির রেখেছেন তা আমরা অনেক দিন মনে রাখব। প্রিয় কবির সুন্দর মনের এটি একটি ছোট্ট উদাহরণ। এমনতরো অসংখ্য ঘটনা আছে যেখানে কবি ও তাঁর সুস্মিতা, বিদুষী পত্নী মুক্তি জহির তাদের আতিথ্য, স্নেহধারা এবং কাছে টেনে নেয়ার বলয় মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়ে উত্তর আমেরিকা তথা সারা বিশ্বের সংস্কৃতিমনা মানুষজনদের কাছে টেনে নিয়েছেন

 

যদ্দুর মনে পরে কোন এক জায়গায় বক্তৃতায় বলেছিলাম, কবি জহিরের মধ্যে কিছু মাজিক্যাল পাওয়ার আছে। আমার মত ঘরকুনো একজন বয়স্ক মানুষকে তিনি কবিতার জগতে (দীর্ঘ ৫০ বছরেরও বেশি বিরতি দেয়ার পর)ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছেন। তাঁর সাথে বছর দুয়েকের পরিচয় ও অনিয়মিত সান্নিধ্যে শখানেক কবিতা লিখতে পেরেছি, গুণগত মান যেমনই হোক না কেন! 




কবি জহিরুল ইসলাম বয়সে তেমন প্রবীণ নন। মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে ৭০টির অধিক গ্রন্থের প্রণেতা হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। জাতিসঙ্ঘের মতো প্রতিস্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি (তিনি আয়কর বিভাগের প্রধান নির্বাহী) নিরলসভাবে নিয়মিত লেখালেখির কাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি-কর্মে অগ্রণী ভূমিকা রাখা এসব একজন কাজী জহিরুল ইসলামই পারেন। তাঁর নেতৃত্বে ও  প্রণোদনায় এই নিউইয়র্কে ডজন খানেক গোষ্ঠী সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা-মহামারীর সময়েও তিনি সাহিত্য, কবিতা পাঠ ও বিতর্ক, বিনোদনমূলক গান বাজনা ইত্যাদি বিষয়ক অনুষ্ঠানের নিয়মিত আয়োজন করে উত্তর আমেরিকা,বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ দূর আফ্রিকার বাংলা ভাষা-ভাষী কবি সাহিত্যিক ও অনুরাগীদের সংস্কৃতি চর্চার ফোরাম সৃষ্টি করে মাতোয়ারা করে রাখছেন। তাছাড়া, এ-রকম ভীতিজনক সময়েও কবি হৈ-হুল্লুড়, পছন্দের খাওয়া-দাওয়া, মেয়েদের নিয়ে নানান দেশের জনপ্রিয় খাবার রান্না, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদনমূলক পরিভ্রমণ ইত্যাদি কোনো কিছুই বাদ দেননি। প্রকৃতির টানে সপরিবারে স্বল্প সংখ্যক আগ্রহী বন্ধুদের নিয়ে বন-জঙ্গল, নদী, জলপ্রপাত, ইত্যাদি চষে বেরিয়েছেন সঙ্গে প্রায়শই যোগ দিয়েছেন মাহবুব হাসান, আনোয়ার হোসাইন মঞ্জু (প্রায়ই সস্ত্রীক) এবং কবি জহির আমার জানামতে এসব আনন্দভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সুখপাঠ্য প্রচুর ভ্রমণরচনা, গল্প-কাহিনী লিখেছেন। কবি জহির একজন সংবেদনশীল মনের মানুষ। বড়ো আরও একটি গুণ হলো তাঁর নিত্য অনুসন্ধান করার প্রচণ্ড ইচ্ছেশক্তি। তাঁর ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে এ-গুণের পরিচয় ক্ষণে ক্ষণেই মেলে । ভ্রমণকাহিনী, আহরিত অভিজ্ঞতা, এমনকি বিভিন্ন দেশের খাবার-দাবার রান্না করাকে শিল্প ও শিক্ষণীয় বিষয় বানিয়ে তিনি আমার মতো পাঠকের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেন সহজেই। তিনি চমৎকার ছবি আঁকেন।  

এতোসব অর্জনেও কাজী জহিরুল ইসলাম কি একজন পরিতৃপ্ত মানুষ? মনে হয় না। স্থবিরতা একেবারেই অনুপস্থিত, ক্লান্তিহীনভাবে নিত্য সৃজনই মানুষটির জীবনের ব্রত বলে ধারনা করা অমূলক হবে না। তাঁর মধ্যে অতৃপ্তি, আরও অর্জনের নেশা লক্ষ্য করি। জয়ের বাসনা, সৃষ্টির উদগ্র ইচ্ছে তাঁকে তাড়িত করে, আগুয়ান হতে প্রেরণা দেয় নিত্যই। ফেসবুকে প্রতিদিনই তাঁর কবিতা, কোন দিন একের অধিক দেখে এমন কথাই মনে হয়। আবৃত্তিও করেন চমৎকার। তিনি কি যোদ্ধা? এ-রকম মনে করার সঙ্গত কারণ খুঁজতে তেমন বেগ পেতে হয় না। তাঁর এ যুদ্ধ মূলত নিজের সঙ্গে। থেমে থাকা, বিরতি নেয়া মনে হয় তাঁর অভিধানে নেই। আগুয়ান হতে হবে – এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি নিজের সাথে। তাঁর সৃষ্ট কাজের বিষয়বস্তু অল্পবিস্তর ঘেঁটে আমার মনে হয়েছে তিনি হাতড়ে  বেড়ান না; বিষয়বস্তু তাঁর অভিজ্ঞ চোখে, মননে আপনাতেই ধরা দেয়; তিনি এক নিপুণ শিল্পী, শিল্প এই কারিগরের হাতে ধরাশায়ী হয়ে ধন্য হয়। কবিতা, সাহিত্য রচনা, গল্প, ভ্রমণ কাহিনী, রম্য রচনা, ইতিহাস, ঘটমান বর্তমান, প্রকৃতি, মানুষ, প্রেম, দ্রোহ – রকমারি বিষয় বেছে নিতে, প্রেক্ষিত নিরূপন করতে সিদ্ধহস্ত কবি কাজী জহিরুল ইসলাম । 

 

কবিতা, সাহিত্য, শিল্প – এসবের  ব্যাকরণ, নব নবতর সব ধারনা নিয়ে এক্সপেরিমেন্টশন তাঁর মত কম বাঙালি কবি, সাহিত্যিককেই করতে দেখা যায়।   অনুবাদ সাহিত্য, বিশেষত বরেণ্য কবিদের কবিতার ভাষান্তর কবি জহির অনায়াসে পারঙ্গমতার সাথে করে থাকেন। একালে কাকতলাতে বেল বইটিতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্নধর্মী কবি আমিরি বারাকার কেউ একজন উড়িয়ে দিয়েছে আমেরিকা কবিতাটির অনবদ্য ভাষান্তর অনেক পাঠককেই মুগ্ধ করবে, যেমনটি করেছে আমাকে। সুফিবাদের গভীর কথা, বাণী তাঁর দেহকাব্য বইটিতে আমার মত পাঠকদের অন্য রকম বোধের জগতে নিয়ে যায়। 

 

কবি জহিরুল ইসলাম সাধারণের বাইরের মানুষ, ব্যতিক্রমধর্মী একজন মামুষ যাকে বিশেষণে আখ্যায়িত করার মতো শব্দসম্ভার আমার অভিধানে অন্তত নেই। নানান বিষয়ে নিরীক্ষাধর্মী সৃষ্টিতে নিরন্তর আগ্রহী, অনুসন্ধিৎসু মন ও মেজাজের এ-কবিকে যতোই দেখি, তাঁর কবিতা ও সাহিত্যকর্ম যতোই পড়ি আমি ততোই অবাক হই, বিস্মিত হই তাঁর অনুভবের গভীরতায়, বিষয়বস্তুর বৈচিত্রে। 

অজস্র শুভকামনা কবি কাজী জহিরুল ইসলাম আপনার ৫৪ তম জন্মবার্ষিকীতে।  সুস্থ থাকুন, দীর্ঘজীবি হয়ে আমাদের সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধতর করতে অবদান রাখুন – এ কামনা আজকের দিনটিতে

 

লঙ আইল্যান্ড, নিউইয়র্ক। ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১।                         

Comments

  1. Play Casinos in Dallas, Georgetown and Harrah's
    Best Casinos 구리 출장샵 Near 태백 출장안마 Harrah's Casino: 1. The Shreveport Hotel · 2. Ameristar 여주 출장안마 Casino Resort · 3. Grand Victoria Casino Resort · 공주 출장샵 4. Holiday Inn Express 밀양 출장안마

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

শিল্পী কাজী রকিবের সাক্ষাৎকার

নন-একাডেমিক শিল্পীরাই নতুন কিছু দেয় -    কাজী রকিব  [কাজী রকিব বাংলাদেশের একজন গুণী শিল্পী। রাজশাহী আর্ট কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক। কলেজের প্রথম ক্লাসটি নেবার কৃতিত্বও তাঁর। নিরন্তর ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান ভাবনার ছবি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সস্ত্রীক বসবাস। তার স্ত্রী মাসুদা কাজীও একজন গুণী শিল্পী। বৈচিত্রপ্রিয় এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ধারাবাহিকভাবে তা এখানে প্রকাশ করা হবে। আজ উপস্থাপন করা হলো প্রথম পর্ব।]   জহিরুলঃ  বেশিরভাগ শিল্পীই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেন ,  নিজস্বতা যাকে আমরা বলি। আবার কেউ কেউ একই ধরণের ছবি বারবার আঁকেন। আপনার কাজে বৈচিত্র খুব বেশি ,  এতে করে "টাইপড" অপবাদ থেকে আপনি মুক্ত কিন্তু নিজের একটি স্টাইল তৈরি করতে না পারা বা তৈরি হয়নি বলে কি আক্ষেপ হয় ,  নাকি এই যে ভার্সেটিলিটি এটাই আপনি বেশি উপভোগ করেন ?    রকিবঃ   আমি আসলে আলাদা করে ভাবিনি এই স্টাইল বিষয়ে। কারো মতো আঁকারও চেষ্টা করিনি তেমন ভাবে। অল্প বয়সে ,  আমার ১৯ / ২০ বছর বয়সে ,  সালভাদর দালির মতো আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন ।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে এবং সংশোধনী প্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার - তৃতীয় পর্ব

মঞ্জু আমার ওপর রাগ করেছে                                                           - আল মাহমুদ [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের  তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]  সাক্ষাৎকার নেবার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু  ও কাজী জহিরুল ইসলাম। ওয়ান্টাগ পার্ক, নিউ ইয়র্ক।  ছবি তুলেছেন ড. মাহবুব হাসান।   জহিরুলঃ  খুশবন্ত সিং তার সকল বই অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি দিলেন আপনাকে এবং সেই অনুমতিপত্রটি তিনি নিজ হাতে আপনার সামনেই বাংলায় লিখে দিলেন। তিনি কিভাবে বাংলা শিখলেন তা কি জানতে পেরেছিলেন ?  মঞ্জুঃ    জ্বি ,  ঘটনাটি  ঘটে  ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ,  এ সম্পর্কে আমি আগের এক প্রশ্নে বলেছি। তারিখটি আমার স্মরণে নেই। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ,  ডিসেম্বরের শেষ দিকে। না ,  বাংলায় নয় ,  উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। আমার কফি পানের সময়ের মধ্যেই লিখে দিয়েছেন। ১৯৮৪ থেকে মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমাকে তিনটি বা চারটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন বলতে আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রতিটি চিঠি ইংরেজিতেই লিখেছেন। প্রতিটি চিঠিতে আমাকে সম্বোধন করেছেন  “ আনোয়ার ভাই ,”  বলে।