Skip to main content

পর্যটক কাজী জহিরুল ইসলাম || মনজুর কাদের


পর্যটক কাজী জহিরুল ইসলাম

 

|| মনজুর কাদের || 




 

কবি হিসাবে পরিচিত হলেও কাজী জহিরুল ইসলাম আমার দৃষ্টি কেড়েছেন ভ্রমন কাহিনী লিখে। তাঁর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা গাঢ়। বাংলাদেশে থাকতেই আমি তার ভ্রমণ কাহিনী পড়েছি  আমরা যারা পৃথিবীর আনাচ-কানাচ দেখিনিতারাযারা দেখেছেন তাঁদের চোখ দিয়েই সেসব জায়গা দেখার প্রয়াস পাই।  পৃথিবীর কোন অঞ্চলের মানুষ দেখতে কেমনতারা কি খায়কি পরেকেমন তাদের চলাচল ইত্যাদি হাজার কৌতূহল আমাদের আছে। 

 

এখন অবশ্য ইউটিউবে আপনি পৃথিবীর যে কোনো এলাকার জীবনাচার দেখতে পারবেন। কিন্তু পর্যটকের নিজস্ব চোখ দিয়ে দেখাতাঁর নিজের অভিজ্ঞতার সাথে আপনার কৌতূহলের সমন্বয় আর ইউটিউব দেখা দুটি ভিন্ন বিষয়। হাতির দাঁতের দেশআদি মানবী লুসিহুতু তুতসি তোয়াআফ্রিকার নীল মানুষহীরের দেশজুগজুগ গাঁয়ের জল বিহীন জীবনআইল শহরের জলদস্যুহুয়াঙ্কায়োর  ভাস্কর্য - ইত্যাদি এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো আপনি ইউটিউবে দেখে যতো না তৃপ্তি পাবেন তার চেয়ে বেশি কৌতূহল মেটাবে কাজী জহিরুল ইসলামের চাক্ষুষ বর্ণনা। কাজী জহিরুল ইসলামের গদ্য রচনা সরল। তিনি ক্লাসিক শব্দের ব্যবহার কম করেন বলে  তাঁর রচনা বেশ ঢক ঢক করে গিলে ফেলা যায়।

 

মানুষ যতো গোঁড়া আঞ্চলিক বা গোঁড়া ধার্মিক হয় ততই অন্তর্মুখী হতে থাকে। এর কারণ তারা বাইরের জগত বা জনপদের সাথে নিজের গোঁড়ামির তাল মেলাতে পারে না। এমন কি গোটাতে গোটাতে নিজের আশপাশের মানুষের আচারও এক সময় এদের সহিষ্ণুতার সীমা ছাড়ায়। আজকের বিশ্বে প্রতিদিন পাকিস্তানআফগানিস্তান,  ইরাকইরানসিরিয়াআলজিরিয়া ইত্যাদি দেশে একটি ধর্মের লোক যে হারে স্বধর্মের লোকদের বিনাশ করছে তার পেছনেও রয়েছে এই অন্তর্মুখিতা ও গোঁড়ামি  নিজের স্বভাব ছাড়া এদের আর কোনো কিছুই ভালো লাগে না।

 

আপনি যতো দেশ বিদেশ ঘুরবেনযতো বেশি মানুষের সাথে মেলামেশা করবেন ততো অন্য ধর্মবর্ণ বা আচারের মানুষের প্রতি পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ বাড়বেগোঁড়ামি ও অন্তর্মুখিতা দূর হবেপৃথিবী বাসযোগ্য হবে। যারা দেশ বিদেশ ঘোরেনযারা ভ্রমণ কাহিনী লিখেনতাঁরা মানবতার জন্য এই পবিত্র কাজটি করেন। কাজী জহিরুল ইসলাম তাঁদেরই একজন।

 

নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭।  

Comments

Popular posts from this blog

শিল্পী কাজী রকিবের সাক্ষাৎকার

নন-একাডেমিক শিল্পীরাই নতুন কিছু দেয় -    কাজী রকিব  [কাজী রকিব বাংলাদেশের একজন গুণী শিল্পী। রাজশাহী আর্ট কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক। কলেজের প্রথম ক্লাসটি নেবার কৃতিত্বও তাঁর। নিরন্তর ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান ভাবনার ছবি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সস্ত্রীক বসবাস। তার স্ত্রী মাসুদা কাজীও একজন গুণী শিল্পী। বৈচিত্রপ্রিয় এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ধারাবাহিকভাবে তা এখানে প্রকাশ করা হবে। আজ উপস্থাপন করা হলো প্রথম পর্ব।]   জহিরুলঃ  বেশিরভাগ শিল্পীই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেন ,  নিজস্বতা যাকে আমরা বলি। আবার কেউ কেউ একই ধরণের ছবি বারবার আঁকেন। আপনার কাজে বৈচিত্র খুব বেশি ,  এতে করে "টাইপড" অপবাদ থেকে আপনি মুক্ত কিন্তু নিজের একটি স্টাইল তৈরি করতে না পারা বা তৈরি হয়নি বলে কি আক্ষেপ হয় ,  নাকি এই যে ভার্সেটিলিটি এটাই আপনি বেশি উপভোগ করেন ?    রকিবঃ   আমি আসলে আলাদা করে ভাবিনি এই স্টাইল বিষয়ে। কারো মতো আঁকারও চেষ্টা করিনি তেমন ভাবে। অল্প বয়সে ,  আমার ১৯ / ২০ বছর বয়সে ,  সালভাদর দালির মতো আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন ।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে এবং সংশোধনী প্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার - তৃতীয় পর্ব

মঞ্জু আমার ওপর রাগ করেছে                                                           - আল মাহমুদ [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের  তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]  সাক্ষাৎকার নেবার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু  ও কাজী জহিরুল ইসলাম। ওয়ান্টাগ পার্ক, নিউ ইয়র্ক।  ছবি তুলেছেন ড. মাহবুব হাসান।   জহিরুলঃ  খুশবন্ত সিং তার সকল বই অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি দিলেন আপনাকে এবং সেই অনুমতিপত্রটি তিনি নিজ হাতে আপনার সামনেই বাংলায় লিখে দিলেন। তিনি কিভাবে বাংলা শিখলেন তা কি জানতে পেরেছিলেন ?  মঞ্জুঃ    জ্বি ,  ঘটনাটি  ঘটে  ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ,  এ সম্পর্কে আমি আগের এক প্রশ্নে বলেছি। তারিখটি আমার স্মরণে নেই। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ,  ডিসেম্বরের শেষ দিকে। না ,  বাংলায় নয় ,  উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। আমার কফি পানের সময়ের মধ্যেই লিখে দিয়েছেন। ১৯৮৪ থেকে মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমাকে তিনটি বা চারটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন বলতে আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রতিটি চিঠি ইংরেজিতেই লিখেছেন। প্রতিটি চিঠিতে আমাকে সম্বোধন করেছেন  “ আনোয়ার ভাই ,”  বলে।