আউয়াল
|| কাজী জহিরুল ইসলাম ||
দীর্ঘজীবী রাজা বল্লাল সেন, জন্মের পর পিতা বিজয় সেন যার নাম রেখেছিলেন বড় লাল সেন, ৭৭ বছর বয়সে পিতার উত্তরাধিকার গ্রহণ করেন। ভগবান শিবের কৃপায় দৈবজ্ঞানপ্রাপ্ত হন এবং ভবিষ্যজ্ঞাত হয়ে জানতে পারেন তিনি শতায়ু হবেন। ৭৭ বছর বয়সে রাজা হলেও চষে বেড়িয়েছেন বঙ্গ, রাঢ়, উড়িষ্যা, মিথিলাসহ রাজ্যের এমাথা-ওমাথা। দ্বাদশ রাজ্যের রাজা হয়ে প্রথা অনুযায়ী করোটিতে ধারণ করেন সম্রাটের মুকুট। ধর্মানুরাগী রাজা বল্লাল সেন পাল সাম্রাজ্য-নির্মিত বৌদ্ধ মঠগুলো রূপান্তর করেন দেবালয়ে। পূর্ববঙ্গের পশ্চাদপদ জনপদের অন্ধকারে, খানিকটা ম্রিয়মান আলো যেখানে জ্বলছিল সেখানেও, তাঁর রাজহস্তিপদধূলি পড়ে। কিন্তু এখানে এসে এই জনপদের মানুষের মূর্খতা দেখে যারপরনাই হতাশ হন তিনি। দেবী দূর্গামূর্তি নগ্ন! দেবীর এহেন অপমান যারা করে তাঁদের ধর্মজ্ঞানে দীক্ষিত করতে গড়ে তোলেন এক দূর্গামন্দির। কি নাম হবে মন্দিরের? যে শহরের মানুষ দুর্গতিনাশিনী দেবীকে বিগ্রহ করে ঢেকে রেখেছে অন্ধকার কাদার নিচে, যারা ঢাকে ঈশ্বরীকে, সেই জনপদের মন্দিরের নাম ঢাকেশ্বরী ছাড়া আর কি হতে পারে? এতদঞ্চলের মানুষের রুচি-বুদ্ধি আর বিবেক ঢাকা পড়ে আছে কাদার অন্ধকারে। মা দূর্গা তাঁদের আলোকিত করুন। রাজা বল্লাল সেনের এই আশির্বাদে একটু একটু করে, অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকা, মানুষের জ্ঞানের আলো জ্বলে উঠতে শুরু করে। ঢাকেশ্বরী মন্দিরই বুঝি এক অত্যুজ্জ্ব্বল প্রদীপ হয়ে জ্বলে ওঠে বুড়িগঙ্গার তীরে।
বুড়িগঙ্গার অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই জনপদের নাম হয়ে গেল ঢাকা। ত্রয়োদশ শতকে পূর্ববঙ্গের এ-শহরটির নাম ঢাকা রাখা হলেও সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এই হিন্দুয়ানী নাম পছন্দ করেননি, তাই কিছুকাল সম্রাটের নামানুসারে একে জাহাঙ্গীরনগর নামেও ডাকা হয়। কিন্তু স্থানীয় পৌত্তলিকেরা জনপদটিকে তার পুরনো নামেই ফিরিয়ে আনেন। ১৯০১ সালে নবাব সলিমুল্লাহ তাঁর বাসভবন আহসান মঞ্জিলে সুইচ টিপে বৈদ্যুতিক আলো জ্বেলে এই শহরকে আক্ষরিক অর্থেই আলোকিত করে তোলেন।
সেই পুরনো ঢাকার এক মহল্লা গেন্ডারিয়া। এই গল্পের শুরু গেন্ডারিয়া থেকে, এমন এক সময়ে, যখন ব্রিটিশরাজ উপমহাদেশে শেষ মরণ কামড় বসাতে ব্যস্ত।
১৯২৬ সালের ৩ এপ্রিল, এডওয়ার্ড ফ্রেডেরিক ফিন্ডলে উড, রাজা পঞ্চম জর্জের অধীনে ভারতবর্ষের ভাইস-রয় এবং গভর্নর জেনারেল হিশেবে শপথ গ্রহণ করেন; ঠিক একই দিনে ভারতবর্ষে হাজারো অগুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, বহু মানুষের মৃত্যু হয়, বহু শিশুর জন্ম হয়, কে তার খোঁজ রাখে। আমরা কেউ কি খোঁজ রেখেছিলাম সেই দিন ঢাকার গেন্ডারিয়ায় মোহাম্মদ হালিম নামের এক শ্রমিকের ঘরে জন্ম নেয় এক শিশু, যার নাম আবদুল আউয়াল। কর্মসূত্রে এই শিশু একজন গুরুত্বহীন রিকশাচালক, হাজারো মানুষের পারাপারকারি, হলেও মৃত্যুসূত্রে একজন ভাষা শহিদ। তাঁর অগুরুত্বপূর্ণ জন্ম বাঙালিদের কাছে এক গৌরবের ইতিহাস, ভাইস-রয়ের শোষণের শপথগ্রহণ-ইতিহাসের চেয়েও অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ।
কাপড়ের বিড়ায় ময়দার রুটি নিয়ে গনগনে আগুনের খোঁদলে হাত ঢুকিয়ে খোঁদলের দেয়ালে থপ থপ করে সাঁটিয়ে দিচ্ছে হালিম মিয়া। মাত্র এক মিনিট পরেই খোঁদলের দেয়াল থেকে লোহার খুন্তি আর আংটা দিয়ে টেনে বের করছে গরম গরম বাকরখানি। এরই মধ্যে আরো দু-তিনটি কাঁচা বাকরখানির রুটি বেলে ফেলেছে হালিম। কাজ করছে ম্যাজিকের মতো। মালিক যথেষ্ঠ খুশি হলেও মজুরি আট আনাই। বাড়তি পায় দশটি বাকরখানি, দুটি রসগোল্লা আর এক আইচা মিস্টির রস। হালিম কখনোই খান রেস্তোরার অন্য কর্মচারীদের সাথে বসে এই খাবারে মুখ দেয় না। কাঁঠালপাতার ঠোঙায় বেঁধে তা ঘরে নিয়ে যায়। ভাগ করে খায় স্ত্রী-পুত্রের সঙ্গে। সকাল-বিকাল খান রেস্তোরায় বাকরখানির চুল্লির তাপে সেদ্ধ হলেও দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটা লম্বা ঘুম দেয় হালিম। তখন সে স্বপ্ন দেখে। দিবাস্বপ্ন। স্বপ্নের রাস্তা ধরে সুসজ্জিত টমটম গাড়ি আসে। সাহেব-সুবোদের মতো কেতাদুরস্ত পোশাক পরা এক যুবক নেমে আসে গাড়ি থেকে। যুবকের নাম আবদুল আউয়াল। তখন ঘুম ভেঙে যায়। ছাপড়া ঘরে বিকেলের তেড়ছা আলো এসে ঢোকে। হালিমের বউ তার কালো গতরখানি আহ্লাদে স্বামীর পায়ে লুটিয়ে দেয়। আট বছরের পুত্র তখন ধুপখোলার মাঠে, কাঁচা জাম্বুরাকে ফুটবল বানিয়ে লাথি মেরে স্বপ্নের মাঠ পার করে দেয়। স্ত্রীর বিশাল স্তনদুটি নিয়ে খেলা করতে করতে স্বপ্নের কথা বলে হালিম। বাড়ির উঠোনে যে উঁচু একটি সফেদা গাছ তার মাথার ওপর ঝুলে থাকা মেঘের চাদরটি খুব ধীরে ধীরে সরে যায়।
- তর পুলায় ক’লাম সিক্ষিত ঐবো, একটা কিছু কেওকেটা ঐবো। আমগো মতন ঐবো না।
- খোয়াব দেকছেন?
- হ, খোয়াবই দেকছি। তয় ঠিকই দেকছি। টমটম গাড়ি দেকছি। আর কি দেকছি হুনবি?
- ক’য়া ফালান। টমটমের কোচোয়ান? বাপে বাকরখানিঅলা আর পোলায় টমটমঅলা?
- আবে হালায় তুই তো কতাটাই বুজলি না। আমগো পোলায় টমটমঅলা ঐবো কেলা? টমটমে ব’য়া আপিসে যাইবো, আপিসের বড় সা’য়েব। ‘সা’য়েব’ শব্দটি উচ্চারণের সময় হালিমের মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়, চোখ দুটো বড় বড় এবং উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, কপালে বেশ কয়েকটি বলিরেখা তৈরি হয়।
নিজেকে আহ্লাদে আরো খুলে দেয় কালো নারী, স্বামীর মুখের আহার হয়ে ওঠে। তখন ওর মুখ থেকে কথা নয়, অন্য এক শব্দ বের হয়। একটিমাত্র ছাপড়া-ঘর, আট বছরের ছেলেকে নিয়ে তিনজনের সংসার। পড়ন্ত বিকেলের এই সময়টাতেই, যখন ছাপড়া ঘরগুলোর ওপর দিয়ে একটি শিনশিনে হাওয়া বয়ে যায়, যখন আহারসন্ধ্যানী পাতিকাকের দলটি সফেদাগাছের ডালে উঠে এক পা তুলে দিয়ে ঝিমুতে থাকে, যখন তাদের পুত্রটি খেলা করতে চলে যায় দূর-দূরান্তের কোনো মাঠে, তখনই ওদের মিলনের সুযোগটি আসে। হালিমের অলস শরীরে ঘুমের নেশা থাকলেও স্ত্রী মরিয়া হয়ে ওঠে। স্ত্রীর অদম্য যৌনাকাঙ্খা হালিমকে এই ধারণা দেয় যে কালো নারীদের যৌনাবেদন অত্যাধিক। স্ত্রীর আকাঙ্খার সমুদ্রে খড়-কুটোর মতো ভেসে যায় হালিম। পরাজয়ের গ্লানি ওকে ক্রমাগত ক্ষুদ্র করে তোলে। ক্ষুদ্র হতে হতে একদিন সে মিইয়ে যায়। গেন্ডারিয়ার এই ছাপড়া ঘরে ফিরে আসে ওর থেতলানো নিথর দেহ। তখনই, প্রথমবারের মতো, ছাপড়াগৃহগুচ্ছের পড়শিরা টের পায় কতখানি প্রেম এই কালো নারী জমিয়ে রেখেছিল তার মনের গহনে। হাতের রেশমী চুড়িগুলো ভেঙে ঝরে যায়, নাকফুল খসে পড়ে, গায়ের নীল শাড়িটির রঙ শুভ্র হয়ে ওঠে। আউয়াল দশ বছরের নাবালক, কালো নারীর ঝিগিরিই মা-ছেলের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।
এর আগে কখনো এই দৃশ্য দেখেনি কালো নারী। লোকটির পেটানো শরীরের সম্মুখদিকে ছোটোখাটো একটি তরমুজ উঁচু হয়ে থাকায় তার আভিজাত্যের জৌলুস বোতাম ঠেলে বেরিয়ে আসতে চায়। কাজ করতে করতে এই দৃশ্য মাঝে মাঝেই দেখেছে সে। এবং সে এ-ও টের পেয়েছে উপুড় হয়ে সিমেন্টের মেঝে মোছার সময় কালো নারীর শাড়ির আঁচল ঠেলে ঝুলে পড়া বর্তুলদ্বয়ের দুলুনি উপভোগ করছে লোকটি। তখন লোকটির চোখে অন্য এক আভা, নারী বলেই হয়ত, হোক না ছোটোলোক, টের পেয়েছে কালো নারী। তবে এর আগে কখনো অমন উদোম গায়ে ঘরের মাঝখানে লুঙ্গি পরে বসে থাকতে দেখেনি তাকে। ঘরে ঢুকেই টের পায় সে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। যেখানে যা থাকবার কথা সেখানে তা নেই। কলতলায় এঁটো থালাবাটি নেই, টিনের বালতিতে ময়লা কাপড় নেই, যে দুটি ঘরে নিঃসন্তান কর্মদাতা দম্পতির বাস, ঘরগুলো রোজকার মতো নয়। আজকের সকালটা অন্যরকম। কিছু কি হয়েছে? প্রশ্নটিই হয়ত ওকে বিপদগ্রস্ত করে। ধ্যানস্থ লোকটি মেঝে থেকে তাঁর উদোম গা নিয়ে উঠে আসে এবং সজোড়ে মুষ্ঠি চালায় কালো নারীর পিঠে। এতেই তিনি ক্ষান্ত হন না। ক্রোধ রূপ নেয় ভিন্ন দিকে, ভিন্ন আক্রোশে নারীকে বিবস্ত্র করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন তিনি। তখন কালো নারীর নাজুক অঙ্গের স্পর্শ লাগে তাঁর গায়ে, এতে তাঁর দেহের উত্তাপ বাড়ে, মাথা এলোমেলো হয়। কাদার নিচ থেকে উঠে আসে ত্রয়োদশ শতকের বিগ্রহ দূর্গামূর্তি। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটতে থাকে কালো নারী। বুঝি এতে লোকটি খানিক আহত হয়ে থাকবে, বুঝি তাঁর চক্ষুগোলক বা অন্য কোনো গোপন গোলক গলে বা থেতলে গিয়ে থাকবে। লোকটি এতে চিৎকার করলো কি খিস্তি করলো তা শোনার জন্য অপেক্ষা করেনি কালো নারী। বিজয়ের গর্ব নেই ওর পদযুগলে, পরাজয়ের গ্লানিও নেই। শুধু সুতির শাড়িটি টেনে-টুনে নিজের ভরাট গতরখানি ঢেকে, যতটা সম্ভব, নিজেকে সভ্য করে তোলার চেষ্টা করে। এলোমেলো চুলগুলো কম্পিত হাতে খোঁপার বন্ধনীতে তুলে নেয়। কেউ কি দেখলো? এরকম একটি শঙ্কা ওর পেছন পেছন হাঁটছে। এক সময় টের পায় শঙ্কাটি ওর চেয়ে দ্রুত গতিতে হাঁটছে এবং ওকে ধরে ফেলছে। ওর পদযুগল দ্রুততর হয়।
লক্ষহীন বেদে বহরের মতো ভাসছে কালো নারীর নৌকাখানি। নৌকা জলে ভাসলেও লক্ষ্য যেহেতু ডাঙা এক সময় না এক সময় কোনো না কোনো ডাঙায় এসে তা ভেড়েই। কালো নারীর নৌকাখানিও একসময় পুরনো ঢাকার মৌলভী বাজারে এসে ভেড়ে।
চার ক্লাস অব্দি পড়লেও পেটে যথেষ্ঠ বিদ্যে পড়েছে, এখন পেটে যাতে দুটো অন্ন পড়ে সেদিকে মন দিতে হবে। উঠোনের লাউয়ের মাচায় বসে যখন দোয়েল ডাকে, কয়েক কদম দূরের একতলা দালানের কার্নিশে বসে যখন চড়ুইয়ের দল কিচিরমিচির করে ভোরে আলো ফোটায় তখন আউয়াল রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে ছোটে সদরঘাট, ভোরের লঞ্চের যাত্রী ধরতে হবে। কত কত যাত্রী আসে, বরিশাল থেকে, খুলনা থেকে, চাঁদপুর থেকে, পটুয়াখালি থেকে, ফরিদপুর থেকে...। রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে পাড়ি দেয় পথ, যাত্রীদের চোখে-মুখে স্বপ্ন, প্যাডেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সেই স্বপ্নের সুতোয় আউয়াল সেলাই করে পথ, সেলাই করে সময়। যাত্রীরা কত রকম গল্প বলে, কেউ ছেলেকে নিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে, কেউ পুকুরের মাছ নিয়ে এসেছে মেয়ে-জামাইয়ের জন্য, কেউ কাজের খোঁজে এসেছে স্বপ্নের শহরে। কেউ কেউ এখান থেকে চলে যাবে কোলকাতা, আরো বড় শহরে, আরো বড় স্বপ্ন তাঁদের চোখে।
যিনি আশ্রয়দাতা, কালো নারীর ফুপাত ভাই, শুভ্র দাড়ি যায় নাভীর কাছে, যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তিনি একদিন কাছে ডাকেন মা ছেলেকে। হোক না দরবেশ, হোক না ফুপাত ভাই, পুরুষ তো, কালো নারীর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সর্বদা সজাগ। উঠোনে নেমে আসে এক ঝাঁক পায়রা, শুভ্র দাড়ি কিছু শস্যদানা ছিটিয়ে দেন উঠোনে, পায়রার দল ভোজানন্দে মেতে ওঠে। শুভ্র দাড়ি এতে খুব আনন্দ পান। যে দুটি সিরাজী পায়রা, যাদের পায়ে মোজা, ওরা পেখম ছড়িয়ে ঘুরে ঘুরে খেলা দেখায়। দুটি বুনো বানর তখন উঠোন অতিক্রম করে উঠে যায় পাশের শ্যাওলা পড়া দালানের কার্নিশে, যেখানে কার্নিশের শ্যাওলায় শেকড় ছেড়ে বেড়ে উঠেছে একটি বটগাছ, পাতা মেলে ছুঁতে চাইছে ছাদের রোদ্দুর। পায়রা-দলের ভোজানন্দে খানিক ছেদ পড়ে এতে, ওরা এক ঝটকায় উড়াল দিয়ে কিছুটা ওপরে উঠে আবার নেমে আসে উঠোনে, যেন শস্যের দানাগুলো চুম্বকের মতো ওদের টেনে নামিয়ে দেয় মাটিতে।
- তুমগোরে আমি সিদা এউগা কতা কইবার চাই। মায়-পোলায় কাম করবার লাগচ, আমি খুসি, বহুত খুসি। কয়দিন বাদে পোলারে বিয়া ভি করাইবা। অহন তোমরা এউগা গর দেইখা লও। বিপদে পড়চিলা, আইনা তুলচি, অহন আপনা রাস্তা দেইখা লও। কি কচ আউয়াইলা, খারাপ কিচু কৈচি?
বেদে বহর দরিয়ায় নামে। কালো নারীর নৌকা ভাসে তরঙ্গসঙ্কুল জলে। ভাসতে ভাসতে কত জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের দেখা মেলে। জলপদ্মের দেখা যেমন মেলে, মা ছেলে পুলকিত হয়, জলজ ক্লেদও সামনে এসে দাঁড়ায়, ওদের ভীত করে, সতর্ক করে। একসময় নিয়তি নৌকাটিকে ডাঙায় এনে ভেড়ায়। ঘাটের নাম ১৯ নম্বর হাফিজুল্লা লেন। আউয়ালের রিক্সার প্যাডেল শক্তি পায়, চাকাগুলো আরো জোরে ঘোরে, যখন স্পোকগুলো ঘূর্ণনানন্দে অদৃশ্য হয়, তখন রিক্সাটি আর রিক্সা থাকে না, দুপাশে দুটি ডানা গজিয়ে যায়, হয়ে যায় স্বপ্নের উড়োজাহাজ। একদিন সেই উড়োজাহাজে ওঠেন একজন বিশিষ্ট মানুষ। এই মানুষের তো রিক্সায় উঠবার কথা নয়, কিন্তু তিনি উঠেন, সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানতে চান কেমন আছেন তাঁরা ব্রিটিশরাজের শাসনব্যবস্থায়। সমবায়ে কাজ করার সময় তিনি বর্গাচাষীদের দূরবস্থা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন। রিক্সায় চড়ে ঢাকা শহর ঘুরে ঘুরে দেখতে চান, কেমন আছে এই শহরের প্রান্তিক মানুষ। তিনি চট্টগ্রামের এক নারীর কথা বলেন, মাত্র একুশ বছরের জীবন ছিল তাঁর। একুশেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। ব্রিটিশ পুলিশের অস্ত্রাগার লুট করতে গিয়েছিলেন ক’জন মিলে। স্বপ্ন এবং সাহসের গান ছড়িয়ে দেন তিনি প্রান্তিক মানুষের চোখে, কানে, হৃদয়ে। একুশ বছরের এক নারী যদি দেশের জন্য জীবন দিতে পারে, আমি কেন পারবো না? ব্রিটিশ তাড়িয়ে এই দেশ স্বাধীন করতে হবে। একদিন আমার সন্তান হবে বড় অফিসার, বেড়ে উঠবে স্বাধীন দেশে, এইসবই, স্বপ্নের ফানুশ, আউয়ালের, আরো আরো প্রান্তিক মানুষের। লোকটি রিক্সা থেকে নেমে যেতে যেতে তাঁর নাম বলে, এ,কে, ফজলুল হক। এই নামের কি মাহাত্ম জানে না আউয়াল, শুধু জানে মানুষটি অন্যরকম, তাঁর বড় বড় চোখে কী সাহস, কী তেজ, কতো যাত্রী তার রিক্সায় উঠেছে, আর কারো চোখে এই তেজ দেখেনি সে।
সেই একুশ বছরের নারীকে কল্পণা করে আউয়াল, তাঁর একটি অবয়ব দাঁড় করায়। কুচি দেয়া শাড়ি, লম্বা হাতার ব্লাউজ, কোমরে আঁচল বাঁধা, কপালে সূর্যের মতো উজ্জ্বল টিপ, মাথায় ঘোমটা নেই, চোখে ক্রোধ, অধিকার আদায়ের তেজ। এরপর বহুজনকে, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, বহুজনকে জিজ্ঞেস করেছে নারীটির কথা, অনেকেই সেই নারীর নাম বলেছে, কীভাবে অস্ত্রাগার লুন্ঠন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছে সেই গল্প ওর চলন্ত রিক্সার সিটের ওপর বসে বলেছে। একজন মাস্টার দা ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা, সেই কথাও বলেছে কেউ কেউ। আউয়াল রিক্সার প্যাডেলে চাপ দিয়ে তাকায় রাস্তার দু’পাশে। কোথাও কি হেঁটে যাচ্ছেন একজন মাস্টার দা? তাঁর হাত ধরে সেই নারী?
একদিন সেই নারীকে খুঁজে পায় সে, সদরঘাটে। ছাপড়া ছাউনির নিচে বসে যে আগুন জ্বালে মাটির চুল্লিতে, চিতই পিঠা নাম দিয়ে যে বানায় গ্রেনেড, বোমা, সে-ই সেই মেয়ে, যার বুকের আগুনে সেদ্ধ হয় চিতই পিঠা। দুপুরে এই এলাকায় থাকলে আউয়াল যাবেই করিমনের ঝুপড়িতে, এক আনার চিতই পিঠা আর চ্যাপা শুটকির ভর্তা, অমৃত। অন্য রিক্সাশ্রমিকেরা যখন গোগ্রাসে খেয়েই ছোটে নতুন খেপ ধরার জন্য আউয়াল তখন ঝুপড়িতে শেকড় ছাড়ে, করিমনের হাতের নড়াচড়া দেখে, কর্মঠ বাহুর দুলুনি দেখে, বাহুর উৎপত্তিস্থলের ছন্দ দেখে। তখন আঁড়চোখে করিমন চায় আউয়ালের চোখের দিকে, মাত্র এক পলকের জন্য, একটু কি হাসির আভাস ফুটে ওঠে করিমনের ঠোঁটে? হয়ত। সেই হাসিতে কি প্রশ্রয়? প্রেম? নাকি যুদ্ধে নামার আহ্বান? ভাবে আউয়াল। একদিন কেউ নেই ঝুপড়িতে, একা আউয়াল, একা করিমন। করিমন গরম গরম পিঠা বানিয়ে তুলে দেয় আউয়ালের টিনের থালায়, আউয়াল খায়। কয়টা খেলো সে? জানে না। কয়টা দিলো সে? জানে না। ওরা শুধু একটি যুদ্ধের বাজনা শোনে।
সেই বাজনা ১৯ নং হাফিজুল্লাহ লেনের মাটিতে এসে আছড়ে পড়ে। শাদা থান পরা কালো নারী বুকে তুলে নেয় লাল শাড়ি পরা তরুণী কালো নারীকে। তরুণী কালো নারী বছর না ঘুরতেই জন্ম দেয় এক শিশু নারী, সে তাঁর মা বা দাদীর মতো নয়, ফুটফুটে পরীর মতো। শিশুটির চিৎকারে নতুন যুদ্ধের দামামা শোনে আউয়াল। পরাধীন দেশে বেড়ে উঠবে এই কন্যা? কিছুতেই নয়। শীতের দুপুরে উঠোনের রোদে দু’পা ছড়িয়ে, পায়ের ওপর নাতনীকে রেখে সারা গায়ে সরিষার তেল মালিশ করে দাদী। মায়ের সাথে মিলিয়ে শিশু কন্যার নাম রাখেন বসিরন। দাদী-নাতনীর কথোপকথন চলে।
- তেজী ঐবি ক’লাম ছেমড়ি, সৈস্যাত্তেল মাকবার লাগছি। পিতিলতা ঐবি, বুজছস? বিটিস খেদাবি। দাদায় আছিল বাকরখানিঅলা, বাপে ঐছে রিকসাঅলা, তুই কি অবি?
শিশু কন্যা তখন কিছুক্ষণ টলমল করে তাকিয়ে থাকে দাদীর চোখের দিকে, এরপর খিলখিল করে হাসতে থাকে। যেন সে তাঁর দাদীর কথার মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পেরেছে।
আউয়ালের রিক্সায় দুজন মানুষ ওঠে। দুজনই উঁচা-লম্বা। ফর্শা গায়ের রঙ, টিকালো নাক। মাথায় টুপি, পরনে শ্বেতশুভ্র পাজামা-পাঞ্জাবী। সদরঘাট থেকে রিক্সা ছুটছে ফুলবাড়িয়া স্টেশনের দিকে। আউয়াল তো আর অশিক্ষিত রিকশাচালক নয়, চার ক্লাসের বিদ্যে রয়েছে তাঁর পেটে। সে জানে প্রীতিলতার কথা, জানে মাস্টার দা’র কথা। জিন্নাহর কথাও জানে, যিনি ইংরেজ খেদিয়ে মুসলমানদের জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্র আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কাজেই রিক্সারোহীদের আলাপচারিতা সে বুঝতে পারে। তাঁরা মুসলিম লীগের জনসভায় যোগ দিতে দিল্লী যাবেন। প্রথমে কোলকাতা, ওখান থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান স্পেশাল’ ট্রেনে চড়ে যাবেন দিল্লীতে। তাঁরা শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গুণকীর্তন করছেন, এই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করায়। আউয়ালের রক্ত টগবগ করে ওঠে। ইচ্ছে হয় আরোহীদের বলেই ফেলে, আমি ভি যামু আপনেগো লগে, নিবেন আমারে? কিন্তু তা আর বলা হয় না।
শুভ্র নীল আকাশে বছর ঘুরতেই কালো মেঘ। সাম্প্রদায়িক শকুনের ডানা। শহরে আতঙ্ক। এখানে-ওখানে চিৎকার ওঠে, রায়ট লাগছে, রায়ট লাগছে। জিন্নাহ নাকি হিন্দুদের বিরুদ্ধে, পাকভূমির জন্য লড়াই করছে। পূর্ববাংলার হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক। রোজ ভোরে লঞ্চ বোঝাই করে হিন্দু এসে নামে সদরঘাটে। কোলকাতার দিকে ছুটছে হিন্দুদের কাফেলা। নোয়াখালিতে আগুন, বরিশালে আগুন, চট্টগ্রামে আগুন, নারায়ণগঞ্জে আগুন, পুড়ছে হিন্দুদের বাড়িঘর। কোলকাতায় পুড়ছে মুসলমানের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কি হচ্ছে এসব? দেশ কি এভাবে স্বাধীন হয়? স্বাধীনতার মানে কী রক্তপাত? আউয়ালের মাথা আউলা হয়ে যায়। তাঁর রিক্সায় নর-নারীদের আহাজারি। ক্রুদ্ধ মুসলমান যাত্রীও আছে, মালাউন গুলিরে কচুকাটা কর। কৈলকাতায় মুসলমান কাইটা ফিনিস করবার লাগছে।
সবকিছু একদিন থিতিয়ে আসে। ততদিনে ভারতবর্ষের দুই কোটি মানুষ হয় গৃহহারা। আসে স্বাধীনতা। স্বাধীন পাকিস্তান। চাঁদ-তারা খচিত পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে বাংলার মানুষ বুক ভরে নিঃশ্বাস টানে, স্বাধীন দেশের বাতাসে।
স্বাধীন দেশের উঠোনে, রোদে, জলপিঁড়িতে বসে হাসে কালো নারী। কোলে তাঁর ফুটফুটে শিশু বসিরন। কালো নারীর হাসি প্রতিধ্বনিত হয় আকাশের মেঘে। চমকে ওঠেন তিনি, চমকে ওঠে বসিরন। কোথাও না কোথাও বাঁধা আছে, কোথাও না কোথাও গিয়ে সবকিছু আটকে যায়। কোনো কিছুই স্বাধীন নয়, না মানুষ, না মানুষের আনন্দ, হাসি-কান্না।
স্বাধীন দেশে স্বাধীন নিয়ম। আউয়াল এখনো রোজ রিক্সার প্যাডেলে চাপ দেয়। চাপ দিয়ে বলে, ‘চলরে আমার উড়ালপঙ্খী’। কিন্তু তা সে সব দিন অর্থের জন্য করে না। সপ্তাহে একদিন সে রিক্সার প্যাডেলে চাপ দেয় আনন্দের জন্য। রিক্সার আরোহী তখন করিমন, শিশু বসিরন আর তার মা, যিনি দূর্গতিনাশিনী দূর্গা। আউয়ালের উড়ালপঙ্খী আকাশে ডানা মেলে দেয়। মেঘের ভেতরে ডুবসাঁতার খেলে পৌঁছে যায় তারাদের দেশে। সেখানে একদল পরী ওদের স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যায় পরীরাজ্যে। পরীর রানি এসে বলে, বসিরন এক পরী শিশু। ওকে আমরা পৃথিবীতে পাঠিয়েছি মানুষের জীবন-যাপন শেখার জন্য। বসিরন তাঁর পিতার রিক্সা থেকে লাফ দিয়ে নেমেই পরী-রানির হাত ধরে। পরীরাজ্যে সে নেচে বেড়ায়, ঘুরে বেড়ায়, যেন এইসব লোকালয় তার কত কত দিনের চেনা। ওর মা, বাবা আর দাদী অবাক হয়ে চেয়ে থাকে বসিরনের দিকে।
স্বাধীন দেশের এই স্বাধীন পরিবারটি যেদিনই ওদের আনন্দভ্রমণে বের হয়, শিশু কন্যাটি এই গল্প শোনার জন্য প্রতিবার তার দাদীকে পীড়াপীড়ি করে। আর প্রতিবারই দাদী গল্পটিকে একটু একটু করে বড় করতে থাকেন। আজ তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেন, ‘একটা পেজগি লাইগা গ্যাছে। বসিরন কয় বাংলা কতা আর পরীরা কয় পরী গো কতা। কেওই কেওইর কতা বুজে না। পরীর রানি কয়, সমাদান আছে। আমি বসিরনের জবান বদলায়া দিলাম, অহন থাইকা বসিরন আর বাংলায় কতা কৈবো না। পরীরাইজ্যের ভাসাই বসিরনের ভাসা।’ বসিরনের দুচোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সে তার দাদীকে বলে, ‘এই কিচ্ছা আর হুনুম না দাদী।’
একদিন আউয়ালের রিক্সা হট্টগোলের মধ্যে পড়ে যায়। চারদিক থেকে ছুটে আসছে মানুষ, এলোপাথারি। স্বাধীন মানুষ ছুটছে দিগ্বিদিক। রায়ট লাগল? এরপর সে দেখে একটি মিছিল। মানুষগুলির হাতে হাতে প্লাকার্ড। ওরা ছাত্র। প্লাকার্ডে লেখা, রাষ্ট্রভাষা, রাষ্ট্রভাষা, বাংলা চাই, বাংলা চাই। আউয়াল এসবের অর্থ বোঝে না। কোনো শিক্ষিত যাত্রী পেলে জিজ্ঞেস করে। অনেকেই তেমন ভালো বোঝে না। তবে কী কী সব বলে ঠিক মাথায় ঢোকে না। স্বাধীন দেশের মানুষকে নাকি অন্য ভাষায় কথা বলতে হবে। বাংলা ভাষা নাকি হিন্দুদের ভাষা, নাপাক ভাষা। কিন্তু এটাই তো সে শিখেছে, জন্মের পর থেকে এই ঢাকাইয়া বাংলা ভাষায়ই তো কথা বলছে। অন্য কোনো ভাষায় কথা বলতে তো সে পারে না। উর্দূ কিছু কিছু বুঝতে পারে। আউয়াল ভাবে - এইটা কিমুন কতা, সরকার কি মাইনসেরে জোর কৈরা উর্দূ কওয়াইবো?
আউয়ালের এখন একটাই চিন্তা, কি করলে বাংলা ভাষায় কথা বলা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। প্রতিটি যাত্রীকে সে একই প্রশ্ন করে। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র তার রিক্সায় ওঠে, ছাত্রের নাম হাবিবুর রহমান। রোগা পাতলা যুবক। সে খুব গুরুত্ব সহকারে আউয়ালকে সবিস্তারে খুলে বলে জিন্নাহর কথা, লিয়াকত আলীর কথা, খাজা নাজিমুদ্দিনের কথা। পাকিস্তানের বড় বড় নেতারা পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা উর্দূ করতে চায় এবং তা হয়ে গেলে বাঙালিদের পড়তে, বলতে এবং লিখতে হবে উর্দূতে। রাষ্ট্রভাষা যাতে বাংলা হয় এজন্য ছাত্ররা আন্দোলন করছে।
সেদিন ছিল ১৪৪ ধারা। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। খুব সাবধানে রিক্সা নিয়ে বেরিয়েছিল আউয়াল। ধীরে ধীরে সে, খালি রিক্সা নিয়ে, গিয়েছিল মেডিকেল কলেজের দিকে। দূর থেকে দেখেছে তান্ডব। গুলি ছুঁড়ছে পুলিশ, কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ছে। লুটিয়ে পড়ছে ছাত্ররা, ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে আহত/নিহতদের অন্যরা। কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এসেছে। অশ্রুফুলে সে শোকের মালা গেঁথেছে পিচঢালা রাস্তায়।
পরদিন সে ছুটে যায় গায়েবী জানাজায়। জানাজা শেষে মিছিল বের হয়। মিছিলে যোগ দেয়। তখন অকস্মাৎ অসুরের মতো মিলিটারি ট্রাক উঠে আসে মিছিলের ওপর, আউয়ালের ওপর, বাংলা ভাষার বুকের ওপর।
১৯৫৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। একটি শিশু ফিতা কেটে উদ্বোধন করছেন শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর। শিশুটির নাম বসিরন। সে মনে মনে তার দাদীকে বলে, আমি পরীর দ্যাসের ভাসায় কতা কমু না দাদী, সারা জীবন বাংলা ভাসায় কতা কমু। ওর দুচোখ থেকে হড়হড় করে বেরিয়ে আসছে দুটি নদী, মেঘনা এবং যমুনা।
উপস্থিত জনতা হয়ত ভেবে থাকবে মেয়েটি তার অকালপ্রয়াত রিকশাচালক পিতার কথা মনে করে কাঁদছে।
Comments
Post a Comment