Skip to main content

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা || আবুল কাইয়ুম

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা: জাতীয়-বৈশ্বিক মেলবন্ধন 

|| আবুল কাইয়ুম || 





 

কবি যদি হন বিশ্বপরিব্রাজকতবে তিনি তো কবিতায় আঁকবেন তাঁর দেখা দুনিয়ার ছবি। বৃহত্ত্বকে আশ্লেষ করার পরিণামে স্বাভাবিকভাবে তাঁর মধ্যে জন্ম নেবে মানবিক মহত্ত্ববোধতা যে কাব্যাদর্শের লাঠিতে ভর করেই হোক। আশির দশক থেকে ক্রমবিকশিত কবি কাজী জহিরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি । পর্যাপ্ত বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতায় আলোকিত হয়েছেন বলেই তিনি যে কোনো সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে নিজেকে উদারনৈতিক মানবিক চৈতন্যে সংগঠিত করতে পেরেছেনবিশ্বমানবতা ও বিশ্বশান্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত রেখেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে জড়ো হয়েছে বৃহত্তর সমষ্টিচেতনাতাঁর প্রেম ও প্রার্থনা মানব কল্যাণের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে। তার লেখনীতে নানা দেশের মানুষের জীবনসংস্কৃতিপ্রেমত্যাগ ও সংগ্রামের চালচিত্র কীভাবে উঠে এসেছে তা তাঁর কবিতার সংস্পর্শে না এলে বোঝা যাবে না। তাঁর এল সালভাদর’ শীর্ষক কবিতার কথাই ধরা যাক। এই অত্যুজ্জ্বল কবিতার মাত্র কয়টি বিস্ময়কর পংক্তিই শুধু এখানে তুলে ধরছি- 

 

হণ্ডুরাস হামাগুঁড়ি দিয়ে নেমে আসে

বুকে ফুটবল ফুটিয়ে হাঁটেন সালভাদরিয়ান তরুণীরা

কেড়ে নেবেহণ্ডুরাস?

সালভাদরিয়ান রক্তের স্রোত নেমে যায় পশ্চিমেপ্রশান্ত নীল জলে

বিজয়একটি দীর্ঘ চুমু….

মাঝরাতে ফের জেগে ওঠে এল সালভাদর।

[এল সালভাদর

 

একটি ভিনদেশের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম ও ত্যাগের মহিমায় বাঙালি কবির হৃদয় আপ্লুত দেখে পাঠক হিসেবে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায়। মুক্তিসংগ্রামের বর্ণনা তাঁর ভাষায় কতটা কাব্যময়তা পেয়েছে তা আমরা উপর্যুক্ত কয়টি পংক্তি পাঠেই উপলব্ধি করতে পারি। এখানে তিনি নারীর বিপ্লবীচারিত্র্যকে তার দৈহিক আলোড়ন দিয়ে নান্দনিকভাবে প্রকাশ করেছেন এবং বিজয়কে তুলনা করেছেন একটি দীর্ঘ চুম্বনের সাথে। এমন সমৃদ্ধ বাণীবন্ধ ও মোহনীয় চিত্রকল্পে সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়কে কবিতায় রূপারোপ করা খুবই কঠিন কর্মযা এসব ক্ষেত্রে সচরাচর দেখা যায় না। এ ধরনের ঋদ্ধ প্রকাশ তাঁর আরো কিছু কবিতায় লক্ষ করা যায়। তিনি যেখানেই মানুষের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হতে দেখেছেন সেখানেই একজন কাব্যসেনার ভূমিকায় প্রতিবাদী মানুষদের পাশে থেকেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের প্রত্যাশা ও আন্দোলন তাঁর কাব্যভাষাকে কতটা নাড়িয়ে দিতে পারে তার প্রমাণস্বরূপ আমি শুধু এখানে তাঁর রুয়ান্ডা’ কবিতার কয়টি পংক্তি তুলে ধরছি-

 

কিগালির রাজপথে স্লোগান ওঠে ভাইভ রুয়ান্ডাভাইভ

জেগে উঠছে কি ভিরুঙ্গা পাহাড়ের অগ্নিগিরি?

কম্পনসন্ত্রাস ক্রমশ রাজপথ থেকে মানুষের হৃৎপিণ্ডে

ভুলত থেকে আকাশের নীলেপর্বত থেকে স্যাঁতস্যাঁতে বিলে

ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত থেকে দ্রুত লয়ে। কাঁপছে ঘরবাড়ি,

বিদ্যালয়ের ব্লাকবোর্ডগীর্জার গম্বুজতুতসী মায়ের হৃৎপিণ্ড।

 

মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম ও আত্মবলিদান নিরীক্ষণ করে কবির এই ব্যাকুলতাই শুধু নয়সমকালীন বিশ্বের বিপর্যস্তদুঃখি মানুষের জন্যও তাঁর অন্তর ক্রন্দিত। যুদ্ধবিদ্ধস্ত জনপদের মানুষের হাহাকারক্ষুধাকষ্ট ও অসহায়ত্বকেও তিনি বাণীবদ্ধ করেছেন তাঁর সহানুভূতিপূর্ণ পংক্তিমালায়। তাঁর হার্দ্র উচ্চারণ-

 

নাইজেরিয়া কাঁপছে ত্রাসে

ইয়েমেনের শিশু কাঁদে

সাউদ সুদান বাদ-বিবাদে

যাচ্ছে মারা একুশ হাজার ক্ষুধার দহনে

কোন কালো হাত জ্বালায় আগুন পেটের গহনে?

[হাতগুলো

 

এসব দৃষ্টান্ত থেকে অকপটে বলা যায়কবি কাজী জহিরুল ইসলাম যুদ্ধবিরোধিতা ও বিশ্বশান্তির পক্ষে কলমসৈনিকের কাজটিই করে যাচ্ছেন। তবে তাঁর কবিকৃতিতে এই বৈশিষ্ট্যই সব নয়তাঁকে এককভাবে যুদ্ধবিরোধী কবি বলে আখ্যায়িত করা যাবে না। আন্তর্জাতিকতা তাঁর কাব্যমানসের একটি উজ্জ্বল প্রান্ত মাত্র। তাই বলে তিনি তাঁর স্বভূমি এই বাংলার মানুষ ও প্রকৃতিকে বিন্দুমাত্র বিস্মৃত হননি। তাঁর চিত্তপটে জাতীয়তা ও বৈশ্বিকতার সমান্তরাল অবস্থান। তিনি আবিদজানে বসে লিখতে পারেন রাঙামাটির কথাসন্তু লারমার সাথে সাক্ষাৎকারের স্মৃতি। আর সে কবিতায় পার্বত্য চট্টলার প্রকৃতি ও আদিবাসীদের জীবনের ছবিগুলো তাঁর কল্পনার রঙে মিশে দারুণ নান্দনিক হয়ে ওঠে-

 

রাঙামাটি থেকে পেদাটিঙটিঙতারপর মাইনিমুখনতুন স্বপ্নে দৈর্ঘ্য

নানাআরো বিস্তৃত। মারমাহিলে আর ত্রিপুরাখুপড়িতে আগুনের ফেনা,

শৈলপ্রপাতের নীল শিখায় পুড়ছে বুকের সাহস মারমা যুবতীদের।

যুবকেরা চোখ মারে অতি গোপনেচেপে ধরে আগুনের বল।

(সন্তু লারমার সাথে হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে)


এই প্রবাসী কবি একদিকে যেমনি বাংলার চিরায়ত নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও সরল গ্রাম্যজীবনের নান্দীকরঅন্যদিকে প্রিয় স্বদেশের বুকে জেঁকে বসা নানা দুঃখ-দুর্দশায়ও বেদনাপ্লুত। তাঁর কার অঙ্গুলি নির্দেশে চলছে আমার দেশ” দীর্ঘ বর্ণনাত্মক কবিতাটি যেন সমকালীন বাংলাদেশের সার্বিক বেহাল অবস্থা ও দুর্দশার এক অনুপম রিপোর্ট। হত্যাগুমসন্ত্রাসদুর্নীতিগণতন্ত্রের বিপর্যয়সহ নানা অন্যায়-অপঘাতের শিকার তাঁর অসহায় স্বদেশ। সে কারণেই বিপুল ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে অর্জিত এই দেশকে ক্লেদমুক্ত করার জন্য অর্থবহ স্বাধীনতার মন্ত্র তাঁর কণ্ঠে উঠে আসে-

 

কতগুলো বড় বড় দালানওভারব্রিজ

আর দূর-পাল্লার সেতু মানে স্বাধীনতা নয়

আজকের দিনে স্বাধীনতা মানেপ্রকৃত অর্থনৈতিক মুক্তি

আজকের দিনে স্বাধীনতা মানেদ্বিধাহীন সত্য শব্দের নির্ভয় উচ্চারণ

আজকের দিনে স্বাধীনতা মানেরাজপথে মাঝরাতে 

বুক চিতিয়ে নির্ভয়ে হাঁটা

আজকের দিনে স্বাধীনতা মানেভোটের পূর্ণাঙ্গ অধিকার… 

 

তিনি যখন প্রেমের কবিতা লেখেন তাও আবার বাংলার প্রকৃতির পেলব সৌন্দর্য নিয়ে মহিমাময় হয়ে ওঠে। কবির হৃদয় ফিরে যায় স্মৃতিময় প্রেমিকার কাছেবাঙালি নারীর শারীরসৌন্দর্য ও তাঁর অনুপম জীবন পরিচর্যার কাছে। 

 

কুচিলা পাতার ফাঁকে দেখেছি তোমাকে সেই কবে

খাঁ বাড়ির ঘাটে বসে গতরে সাবান মেখেছিলে

কাঁপছিল পুকুরের জল স্তনের দুধের ভারে

বেতসের বনে ডেকে ওঠে বিস্ময়ে আইড়াকুপি

 

এমন সুষমামণ্ডিতকমনীয় চিত্রকল্প দিয়ে কবিতা সাজানো চাট্টিখানি কথা নয়। দারুণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও নান্দনিক কাব্যভাষায় প্রকাশ পেয়েছে গ্রাম্যবালার নধর যৌবনের বর্ণনাকবির ভালোলাগার স্মৃতি। প্রবাসী কবির হৃদয় পড়ে আছে যেন সেই খাঁ বাড়ির ঘাটেসুরূপা স্বদেশের গহীনে। 

কবি বিশ্ব ঢুঁড়ে নানা পরিবেশ ও প্রকৃতির মাঝে অনেক নারীর সৌন্দর্য ও স্বভাব নিরীক্ষণ করেছেনতাদের বিচিত্র স্বরূপ কবিতার পর কবিতায় তুলে ধরেছেন। নারীচরিত্র অঙ্কনে তিনি এক পারঙ্গম শিল্পী। তিনি যেমনি এঁকেছেন তাঁর ঘাড়ে নিঃশ্বাসের ককটেল’ ছুঁড়ে ফেলা মার্কিনী কিশোরোত্তীর্ণা শ্বেতাঙ্গিনী বিপনন কন্যার আধুনিক জীবনচিত্রতেমনি তুলে ধরেছেন রুয়ান্ডার প্রাকৃতিক পরিবেশে কামচারিণীধর্ষিতা ও নিবর্তিতা আধা-সভ্য তুতসি রমণীদের জীবন ও ক্ষোভের জলজ্যান্ত ছবি। নারী তাঁর কবিতায় একাধারে শক্তিরূপিনীমায়াবিনীরমন সহচরী এবং প্রেমিকা। জাদুর পাখি’ শীর্ষক কবিতায় তিনি লেখেন-

 

নারীর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে জাদুর পাখি 

দেখায় ডানার ক্ষমতা আজ

হলুদ চঞ্চুর ঘর্ষাঘাতে জ্বেলে দেয় এ কোন সভ্যতা

ভালোবাসার বির্তন ঘটায় রাতের অন্ধকারে।

 

এসবই শেষ নয়। অসংখ্য জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ ও অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়। কবি কাজী জহিরুল ইসলামের কাব্যমানস সর্বভূমিতে বিচরণের অস্থিরতায় গড়া। জাতীয় ও বৈশ্বিক – এই উভয় পরিমণ্ডল থেকে তিনি তুলে এনেছেন কবিতার অনুষঙ্গ। বিভিন্ন দেশের পটভূমিতে লেখা কবিতাগুলোয় প্রচুর বিদেশি শব্দ ও নাম ব্যবহার করেছেন তিনি। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট দৈশিক পরিবেশ ও সমাজ-সংস্কৃতির অন্তর্গত নানা বিষয় ও ঘটনার উপস্থাপন করেছেন। এভাবেই বাংলার এই কবি কাজী জহিরুল ইসলাম মহৎ বৈশ্বিক চেতনায় স্নাত হয়ে বাংলা কবিতাকে পৃথিবীর কবিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস পেয়েছেন।

 

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম তাঁর কল্পনাবুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা  ও চাক্ষুষ অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে বিচিত্রধর্মী কাব্যিক আবহ গড়ে তুলেছেন। কবিতার অন্তরঙ্গন ও বহিরঙ্গন – উভয় প্রান্তেই তিনি তাঁর স্বাতন্ত্র দিয়ে বিবিধ অভিনবত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন। এর ফলে তাঁর কবিতা সমকালিক অনেক কবির কবিতা থেকে একটু ভিন্ন ধারায় স্রোতোস্বিনী হয়েছে এবং কবি হিসেবে তাঁর জন্য ইতোমধ্যে একটি বিশিষ্ট অবস্থান নির্দিষ্ট করেছে। এই বহুত্বচারী কবি আঙ্গিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও মোক্ষম শিল্পী। 

 

সৃষ্টিশীলতার প্রবল অস্থিরতা নিয়ে তিনি একের পর এক যূথবদ্ধ ও যূথমুক্ত প্রকৃতির ঋদ্ধ কবিতা রচনা করেছেন। কাজী জহিরুল ইসলাম বহিঃদৃশ্য বর্ণনার মাঝে তাঁর আন্তরপ্রকৃতি স্থাপন করেছেন। কল্পনা ও বাস্তবতার সংঘাতে তাঁর কবিতা ঐশ্বর্যশালী হয়ে উঠেছে। তাঁর ভাষা  প্রাণবন্তধ্বনিমাধুর্যে ঋদ্ধ এবং আবৃত্তিসফল। তিনি একদিকে যেমন স্বদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তের পরিবেশ-সঙ্কট-সংগ্রামলোকজীবননগরসভ্যতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করে কবিতায় নান্দনিক সুষমা ছড়িয়েছেনঅন্যদিকে আধুনিকতা ও ব্যক্তিগত মৌলিকত্বের মেলবন্ধনে গড়ে তুলেছেন তাঁর কাব্যভাষা। তিনি প্রায়শ সহৃদয় মেজাজপ্রখর রসবোধ ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টিপাত দ্বারা আবেগ ও আঙ্গিকের সংহতি রক্ষা করেছেন। মোটা দাগে তাঁর কাব্যশৈলীর তিনটি প্রান্তর:- ১. রীতিসিদ্ধ ছন্দে লেখা কবিতা ও পদ্য২. গাঢ়বদ্ধ শব্দাবলীর বুননে কবির আপন ছন্দে উদ্ভাসিত অর্ধমূর্তঅর্ধবিমূর্ত কবিতা৩. সাধারণ গদ্যে বর্ণনাত্মক বা বিবৃতিমূলক কবিতা। রীতিসিদ্ধ ছন্দ বলতে কবি আশ্রয় নিয়েছেন দুটো ছন্দের : স্বরবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। আবার মাঝে মাঝে শিথিল অক্ষরবৃত্তেও কবিতা গড়েছেন। শিথিল এই অর্থে যে,- তিনি নিজস্ব ধারায় কিছুটা হেরফের এনে ছন্দ ভেঙেছেনসচেতনভাবেই পর্বগুলোর ধ্বনির সামঞ্জস্য বিধান করেননি। এটা দূষণীয় কিছু নয়যিনি ছন্দ জানেনতিনি নিজের মতো করে ছন্দ ভাঙতেও পারেন। তাঁর কুশলী হাতের পরশে সেই কাব্যভাষাও নান্দনিক ও ধ্বনিমাধুর্যমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। এখানেই কবির মুন্সিয়ানা। তাঁর গদ্যছন্দ ও বিবৃতিমূলক ধারার কবিতাগুলোও উপস্থাপনগুণে সফল কবিতা হয়ে উঠেছে।

 

কবির ছন্দবোধ কতটা দীপ্র তা তাঁর দেহকাব্য পর্যায়ের কবিতাগুলো পাঠেই উপলব্ধ হবে। প্রেম-রিরংসার বর্ণনায় উজ্জ্বল এই কবিতাগুচ্ছ থেকে আমি শুধু একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরবো-

 

তানপুরাতে প্রহর বাজে দেহের কলতানে

চার তারে কী সুর উঠেছে দুআঙুলের টানে।

এখন আমি অন্য সুরে মাতাল হতে চাই

প্রহর বাজে কষ্ট প্রহরনষ্ট অযথাই

উল্টো করা তানপুরাতে সুরের খেয়ালে

অন্ধ গায়ক কি খোঁজে এই নরোম দেয়ালে?

 

[দেহকাব্য-২৯

 

স্বরবৃত্ত ছন্দের আটপৌরে বাঁধনে এমন চমৎকার চিত্রকল্প প্রয়োগ বিস্ময়কর বটে। তদুপরিতিনি তানপুরা ও গায়ক – এই দুই প্রতীকের আড়ালে মানব-মানবীর প্রেম-কামের যে চিত্তনন্দন দৃশ্যপট এঁকেছেন তার কোনো তুলনা হয় না। কিন্তু সবকিছুই ভীষণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাণীরূপ পেয়েছে। কবিতাটির ভাব-সুষমার সম্ভোগে পাঠক হিসেবে আমরা তৃপ্ত হইএর ছন্দদোলায় আমাদের প্রাণও দুলে ওঠে। তাঁর স্বরবৃত্তের কবিতাগুলো এমনই সৌকুমার্যমণ্ডিত। এই ছন্দ আমাদেরকে আরো বেশি প্রণোদিত করে যখন তার সাথে যুক্ত হয় দারুণ সব মধ্যানুপ্রাসযেমন দেখি তাঁর মধ্যরাতের পদ্য’ শীর্ষক কবিতায়- 

 

মধ্যরাতে সদ্য লেখা পদ্যটাকে উড়িয়ে দিলাম

বন্ধ ঘরের অন্ধকারে ছন্দগুলো মুক্ত স্বাধীন

তোমার কাছে পাঠানো এই পত্রখানি ঠিকানাহীন

কষ্টরাতের অষ্টপ্রহর নষ্টমলিন স্মৃতির খামে

যত্ন করে রত্ন ভেবে পোস্ট করেছি তোমার নামে

অদ্য আমি বিস্মৃত ব্রান্ড মদ্যপানে বিভোর ছিলাম

 

আমার যা দৃষ্টিগোচর হয়েছেবিশুদ্ধ অক্ষরবৃত্তে কবি অল্পই লিখেছেন। সে তুলনায় তাঁর কবিতায় অক্ষরবৃত্তের ঝাঁজযুক্ত স্বাধীন আঙ্গিক ও গদ্যছন্দশৈলী বেশি দেখা যায়। তবে তিনি সব শৈলীতেই পরিপক্ক। এখানে দৃষ্টান্তস্বরূপ অক্ষরবৃত্তে রচিত তাঁর কবিতার মাত্র কয়টি পংক্তি তুলে ধরছি- 

 

ডানার তরঙ্গসভা নিভে যায় এক বোকা অশ্বত্থের গায়ে

সীতার কানের দুল অন্ধকারে খুঁজে ফেরে প্রবীণ জটায়ু

গায়ের বসন তার বিসর্জন দেয় যমুনার জলে

[নিশিট্রেন

 

তাঁর এ-প্রকৃতির কবিতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো প্রবহমানতাযেটি তাঁর স্বরবৃত্তের কবিতায় সর্বদা পরিদৃষ্ট হয় না। তাঁর গদ্যছন্দের কবিতাগুলোর বক্তব্যও এমনি পংক্তির পর পংক্তিতে এক ধারায় বয়ে চলে। তার মাঝেই চলে আসে নানা ক্ষেত্রকে অবলম্বন করে সৃষ্ট সুন্দর সুন্দর চিত্রকল্পযেমন ওপরের কবিতাংশে নিসর্গাশ্রয়ী একটি চিত্রকল্পের সাথে জুড়ে দেওয়া একটি মিথাশ্রয়ী চিত্রকল্প দেখা গেল।

 

হ্যাঁতাঁর অধিকাংশ কবিতা গদ্যভঙ্গিতে লেখাযেগুলো নানা আকার বা চেহারায় দৃশ্যমান তাঁর কবিতার পর কবিতায়। তবে আবয়বিক প্রকৃতি যাই থাকধ্বনিস্পন্দিত গদ্যছন্দ কিংবা বর্ণনাত্মক গদ্যশৈলীতে এসব কবিতার ভাষাবন্ধ গড়ে উঠেছে। । আবার এই দুই ভাষাভঙ্গির মিশ্রিত স্বরূপও লক্ষ করা যাবে তাঁর কিছু কবিতায়। তবে তাঁর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিআমার মতেক্রিয়াপদহীন কাব্যভাষা। এই শ্রেণির কবিতাগুলোয় কবি শব্দগুলোর বিন্যাস এমন কৌশলে করেছেন যেক্রিয়াপদগুলো অন্তরালে কাজ করেছে। এর ফলে পংক্তিগুলোতে অর্থবোধক বাক্যের মতোই সম্পূর্ণ মনোভাব ফুটে উঠেছে। এ ধরণের আঙ্গিক নির্মাণের বেলাতেও তিনি গদ্যছন্দ ও শিথিল অক্ষরবৃত্ত ব্যবহার করেছেন এবং কদাচিৎ পংক্তিতে অন্ত্যমিল জুড়ে দিয়েছেন। যেমন-

 

আমাদের হাতগুলোই সেতু এই খরতপ্তরোদে

দুঃখ-কষ্টেরই নয় শুধু

সঞ্চিত স্বপ্নেরও টোল-ফ্রি পারাপার

অতঃপর একটি সহনশীল সমতা দুপাড়েই

ওপারের কিছু কষ্ট এপারে

এপারের কিছু স্বপ্ন ওপারে

এভাবেই আমাদের সংসার সংসার খেলা

সেই ছেলেবেলা…….

 

[কবিতাঃ সেতুগ্রন্থঃ ক্রিয়াপদহীন ক্রিয়াকলাপ

 

এই কবিতায় ক্রিয়াপদ নেই সত্যকিন্তু বাণীবন্ধগুলো কোনো না কোনো ক্রিয়া প্রকাশ করছে। এখানে শব্দভারাক্রান্ত জটিল ভাষা এবং পরোক্ষ বোধের কসরৎ নেইকল্পনা ও স্মৃতিকাতরতার সহজবোধ্য ও সুন্দর প্রকাশ ঘটেছে। আর তার সাথে অক্ষরবৃত্তের ছন্দাভাষ ও পেলব চিত্রকল্প যুক্ত হয়ে অনুপম কবিতা হয়ে উঠেছে। তাঁর শব্দাবলী মিলে মিশে একপ্রকার সহযোগী তাললয় সৃষ্টি করেছে।

 

তাঁর বর্ণনামূলক দীর্ঘ কবিতাগুলো বিশ্বের নানা স্থানের জীবনসমাজ ও সংস্কৃতির নির্যাস নিয়ে জড়োয়া শিল্পকিন্তু এগুলোর ভাষা যেন নিরেট গদ্যের। আওয়ার অভিবাসী স্বপ্ন’ কবিতাটির কথাই ধরা যাকএকেবারেই বিবৃতিধর্মী সরল বাণীবন্ধভাষার গাঢ়বদ্ধ বুনন নেইতবে গল্প বলার মতো বৈঠকী আমেজ আছে। মানুষের ঘরে ঘরে ফাইফরমাস খাটা হাওয়া নামের এক অভিবাসী মেয়ের জীবন ও ঘর বাঁধার সুখস্বপ্নকে তুলে ধরেছেন তিনি। উপস্থাপনগুণে পুরো গল্পটিই কবিতা হয়ে উঠেছেঅথবা বিপরীতক্রমে বলা যায়পুরো কবিতাটিই গল্প। তাঁর অধিকাংশ কবিতার তুলনায় এখানে চিত্রকল্প নেই বললেই চলেকিন্তু সার্বিকভাবে কবিতাটিই একটি বাস্তব চিত্র। একটু উদ্ধৃতি দেওয়া যাক-

 

হাওয়ার বয়স তেইশ। ওরা ডাকে আওয়া বলে। ফরাসী ভাষায়

এইচ উচ্চারিত হয় না বলে হাওয়া হয়ে গেল আওয়া।

আর হোটেলগুলো সব ওটেল। এক খা খা বিরাণ মরুদেশ নিজার।

কাজ নেইকর্ম নেইহারমাটানের 

অন্ধকারে ডুবে আছে মুসলিম অর্থনীতি।

 

বর্ণনার মধ্যে যাদুবাস্তবতার প্রয়োগ মিশিয়ে অনন্য কাব্যভাষা গড়লেন তিনি হাসপাতালের বারান্দায়’ শীর্ষক কবিতায়। বাস্তব ঘটনার মাঝে তিনি জুড়ে দিলেন এক অবিশ্বাস্য আখ্যান। তা অবিশ্বাস্য হলেও যেন বাস্তব হয়ে গেল। হাসপাতালে প্রসূতির শয্যার পাশে চলে এল স্বর্গ থেকে দুই ফেরেশতাতারা এসে খুনসুটি জুড়ে দিল সদ্যজাত মেয়ে শিশুটির সাথে। বর্ণনাটি এরকম-

 

প্রথম ফেরেশতাটি বলে

তোর মা মরেছে

দাঁতহীন মাড়ি দেখিয়ে হাসির ঢেকুর তোলে নবজাতক

এই তো বত্রিশ নালে দুধ খেয়ে এলাম

তা হলে তোর বাপ

তখনই কান্নার হেঁচকি তোলে অসহায় বালিকা

সেই কাকভোরে বেরিয়ে গেছে ওর পিতাঅমঙ্গলের ভ্যানগাড়ি থেকে

কয়েকটি ইঁদুর লাফিয়ে পড়ে ঢাকার রাজপথে

মেয়েটির অসহায়ত্ব দেখে মজা পায় পাজি ফেরেশতাগুলো

এরপর দ্বিতীয় ফেরেশতাটি বলে 

তোর মামার বাড়ির ঘর পোড়া যায়

ইতিউতি চোখ মেলে চায় বালিকা তখন

খোঁজে আগুনের লেলিহান শিখা

 

এই কল্পকথার পর আবার কবি চলে গেলেন মুমূর্ষু প্রসুতির বাস্তব বর্ননায়। কবিতাটির কথা ও কাহিনী আরো বিস্তৃতঅনেক অসম্ভবের চাষাবাদ আছে সেখানে। কিন্তু এর প্রতিটি কথাতেই প্রকাশ পেয়েছে অসামান্য বুদ্ধিদীপ্তি। কবির প্রতিটি কবিতাতেইযেগুলো আমার পড়ার সুযোগ হয়েছেনানা ধারায় বিচিত্র উপস্থাপনের মাঝে তাঁর পরিশীলিত বৌদ্ধিক ছাপ রয়েছে।

 

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম একজন সম্পন্ন চিত্রকল্পশিল্পী। বাস্তব-পরাবাস্তব ও মূর্ত-বিমূর্ত ছবি এঁকে এঁকে তিনি প্রায়শ তার পংক্তি গড়েন। তাঁর গল্পসম কবিতাগুলোতেও কতকগুলো বাস্তব ছবি থাকেসেগুলোতেও অল্পস্বল্প তাঁর কল্পনার ছাপ রয়েছে। আবার তিনি যেমন বাস্তব জীবনের ছবি এঁকেছেনতেমনি মগ্নচৈতন্যে আচ্ছন্ন থেকে প্রাণছোঁয়া চিত্রকল্প গড়েছেন। এই স্বপ্ন ও বাস্তবের কবি চিত্রকল্প নির্মাণের ক্ষেত্রে কী মাত্রায় কৌশলী তা নিম্নোক্ত কবিতাংশ থেকেই স্পষ্ট হবে- 

 

অপেক্ষারা হরহর করে হেঁটে যায়তিন পায়ে

সিলিংফ্যানগুলো বাতাসের নিচে দোল খায়

ফ্লোর থেকে এক টুকরো আকাশ তুলে নেয় মিলেনিয়াম শিশু

ফুঁ দিয়ে ওড়ায় ছাদের দোতলায়

অপেক্ষারা চুপচাপ বসে থোকে টিভিস্ক্রিনে

সোফাগুলো নরম নিতম্বে ঝটপট বসে পড়ে

জানালারা এগিয়ে এসে কানকথা লাগায় দুটি বোরকার মাঝখানে

বোরকাদের ভেতরে চারটি প্রেনেড 

গরম হতে থাকে মাঝরাতে কাঁদবে বলে

 

[অপেক্ষারা]

 

চিত্রকল্পগুলো কবিতাটিকে একটি মালার মতো গেঁথে রেখেছেযা চোখ ও হৃদয়কে আবিষ্ট করে। এমন চিত্রকল্পঘন আঙ্গিক তাঁর অনেক কবিতাতেই পরিদৃষ্ট হয়।

 

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম টেকনিকের বৈচিত্র্যের জন্য ভাষাগত অসামঞ্জস্য বিধান ও সঙ্গতিহীন শব্দপ্রয়োগে ধাতস্ত নন। তিনি এক নিপুণ শব্দশিল্পী। সৌন্দর্যবোধগভীর চৈতন্য এবং চিত্রকল্প ব্যবহারের দক্ষতার জন্য তাঁর কবিতাকে গুণমানে বিশিষ্ট বলা যায়। 


অবশ্য গল্পসম সরল বর্ণনাত্মক কবিতাগুলোতে তেমন শব্দখেলা নেইহৃদয়ের ছবি আঁকা হয়নি খুব একটা। অপর কবিতাগুলোর আঙ্গিক ও মর্মক্রিয়াপদহীন কবিতাসমেতপাঠককূলের চোখের তৃপ্তি ও ভাবনার খোরাক জোগায়। এসব কবিতার বাণীবন্ধগুলোতে মূর্ত তরতাজা ছবিগুলো দৃষ্টিকে নন্দিত করে এবং কবিতার ভেতরবস্তুগুলো পাঠকের বোধকে নাড়া দেয়অন্তরকে জাগ্রত করে। তাঁর কবিতার দর্শন নানামুখো চৈতন্যের সংশ্লেষে গড়ামানবিকতারোমাণ্টিকতাআধ্যাত্মিকতাআন্তর্জাতিকতাস্বদেশসংলগ্নতা ও ঐতিহ্যচেতনার সমন্বয়ে গঠিত তাঁর কবিমানস। 

 

তিনি সময়স্বদেশনিসর্গ ও পৃথিবীর অভিনিবেশী দর্শক ও উপস্থাপক। তাঁর প্রায় প্রতিটি কবিতা সতর্কভাবে রচিতসুচারুরূপে শিল্পিত এবং দক্ষ বুননে ঋদ্ধ। তাঁর রয়েছে প্রখর বুদ্ধিদীপ্তি ও শান্ত রসবোধ। তাঁর আর এক মাহাত্ম হলো,- তিনি বারবার কাব্যশৈলী পাল্টেছেননতুন যুগের পাঠকদের উপহার দিয়েছেন নতুন কাব্যভাষা। তিনি কবিতার মাধ্যমে মানুষের সুস্থ অনুভূতি ও মূল্যবোধকে জাগ্রত করতে সচেষ্ট হয়েছেন। অন্যদিকে তিনি একজন প্রফুল্ল ও পরিব্যাপ্ত মানুষ - বিচিত্র বিষয়ে তিনি ব্যপ্ত তাঁর অকপটতা ও মুগ্ধতা নিয়েতাঁর সচেতন প্রেম-কাম ভিত্তিক অনুভূতি নিয়েসৌন্দর্যবোধ নিয়ে। তিনি সারা দুনিয়ার বিধ্বস্ত-অবদমিত-প্রহৃত-বিপন্নদের প্রতি সহানুভূতিশীল থেকেছেনতাদের প্রেমজীবনসংগ্রাম ও সংস্কৃতির আখ্যান রচনা করেছেন। জাতীয়-বৈশ্বিক চেতনায় পরিশীলিত এই কবির হাত ধরে আধুনিক বাংলা কবিতা আরো এক ধাপ এগিয়ে যাক – এটাই প্রত্যাশা।

 

ঢাকাবাংলাদেশ। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৭।

Comments

Popular posts from this blog

শিল্পী কাজী রকিবের সাক্ষাৎকার

নন-একাডেমিক শিল্পীরাই নতুন কিছু দেয় -    কাজী রকিব  [কাজী রকিব বাংলাদেশের একজন গুণী শিল্পী। রাজশাহী আর্ট কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক। কলেজের প্রথম ক্লাসটি নেবার কৃতিত্বও তাঁর। নিরন্তর ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান ভাবনার ছবি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সস্ত্রীক বসবাস। তার স্ত্রী মাসুদা কাজীও একজন গুণী শিল্পী। বৈচিত্রপ্রিয় এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ধারাবাহিকভাবে তা এখানে প্রকাশ করা হবে। আজ উপস্থাপন করা হলো প্রথম পর্ব।]   জহিরুলঃ  বেশিরভাগ শিল্পীই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেন ,  নিজস্বতা যাকে আমরা বলি। আবার কেউ কেউ একই ধরণের ছবি বারবার আঁকেন। আপনার কাজে বৈচিত্র খুব বেশি ,  এতে করে "টাইপড" অপবাদ থেকে আপনি মুক্ত কিন্তু নিজের একটি স্টাইল তৈরি করতে না পারা বা তৈরি হয়নি বলে কি আক্ষেপ হয় ,  নাকি এই যে ভার্সেটিলিটি এটাই আপনি বেশি উপভোগ করেন ?    রকিবঃ   আমি আসলে আলাদা করে ভাবিনি এই স্টাইল বিষয়ে। কারো মতো আঁকারও চেষ্টা করিনি তেমন ভাবে। অল্প বয়সে ,  আমার ১৯ / ২০ বছর বয়সে ,  সালভাদর দালির মতো আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন ।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে এবং সংশোধনী প্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার - তৃতীয় পর্ব

মঞ্জু আমার ওপর রাগ করেছে                                                           - আল মাহমুদ [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের  তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]  সাক্ষাৎকার নেবার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু  ও কাজী জহিরুল ইসলাম। ওয়ান্টাগ পার্ক, নিউ ইয়র্ক।  ছবি তুলেছেন ড. মাহবুব হাসান।   জহিরুলঃ  খুশবন্ত সিং তার সকল বই অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি দিলেন আপনাকে এবং সেই অনুমতিপত্রটি তিনি নিজ হাতে আপনার সামনেই বাংলায় লিখে দিলেন। তিনি কিভাবে বাংলা শিখলেন তা কি জানতে পেরেছিলেন ?  মঞ্জুঃ    জ্বি ,  ঘটনাটি  ঘটে  ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ,  এ সম্পর্কে আমি আগের এক প্রশ্নে বলেছি। তারিখটি আমার স্মরণে নেই। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ,  ডিসেম্বরের শেষ দিকে। না ,  বাংলায় নয় ,  উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। আমার কফি পানের সময়ের মধ্যেই লিখে দিয়েছেন। ১৯৮৪ থেকে মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমাকে তিনটি বা চারটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন বলতে আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রতিটি চিঠি ইংরেজিতেই লিখেছেন। প্রতিটি চিঠিতে আমাকে সম্বোধন করেছেন  “ আনোয়ার ভাই ,”  বলে।