সফিউর
বিশাল হলঘর, ষোলো ফুট উঁচু সিলিং, পেছনের লম্বা আয়তাকার দেয়ালে চারটি বড় বড় জানালা, জানালার শিকে এবং কাঠের কপাটে সবুজ রঙ করা। আট ফুট উঁচু আর ছয়ফুট চওড়া খোলা জানালায় ঝুলছে নেটের শাদা পর্দা; একটু নড়ছে না, কাঁপছেও না। গুমট আবহাওয়া। ভ্যাপসা গরম পড়েছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল নগরবাসী কিন্তু গরমটা মোটেও কমেনি, যেন আরো একটু বেড়েছেই। ষোল ফুট উঁচু সিলিঙয়ের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝেই বৈদ্যুতিক পাখার গতি দেখে হিসাব বিভাগের কর্মচারীরা। যেন পাখার দিকে তাকালে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। গুমট পরিবেশটিকে আরো গুমট করে তুলেছে ডেপুটি চিফ হিসাবরক্ষক সালমান আলী। রাওয়ালপিন্ডির এই শশ্রুমণ্ডিত ভদ্রলোক বাঙালিদের সব সময় সন্দেহের চোখে দেখেন। বাঙালি মাত্রই অসৎ এই রকম একটি প্রাক-ধারণা নিয়েই তিনি ঢাকা হাই কোর্টের হিসাব বিভাগে যোগ দিয়েছেন। করণিকদের দু’জন হেড ক্লার্ক জমশেদ মিয়ার টেবিলের পাশে জড়ো হয়ে ফিসফাস করে সালমান আলীর সমালোচনা করছেন। একে একে অন্যরাও, কারো হাতে চিঠির খসড়া, কারো হাতে ফাইল, ধীরে ধীরে উঠে জমশেদ মিয়ার টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। যেন প্রধান করণিক জমশেদ মিয়াকে ফাইল বা চিঠির খসড়া দেখাতে যাচ্ছেন তাঁরা।
হিসাব বিভাগের সুবিশাল হলঘরটিতে প্রবেশের দুটি সমান্তরাল দরোজা, একই দেয়ালে। দরোজা দিয়ে ঢুকে ডান দিকে, উল্টোদিকের দেয়ালের কাছে, যেখানে বিশাল একটি জানালা, জমসেদ মিয়ার সেক্রেটারিয়েট টেবিল। টেবিলের সামনে দুটি হাতলওয়ালা সেগুন কাঠের ভিজিটরস চেয়ার। ঠিক তার উল্টোদিকে, ঘরের অন্যপ্রান্তে, সফিউরের টেবিল। সফিউর মাথা গুঁজে কাজ করছেন। একমাত্র সে ছাড়া আর সব করণিক এখন জমশেদ মিয়ার টেবিলের আশে-পাশে। জমশেদ মিয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যান। বাঙালি অফিসার হলে এতোটা ভয় পেতেন না কিন্তু পশ্চিমা অফিসারগুলি যেন এদেশে এসেছেই বাঙালিদের কবর রচনা করতে। গভর্ণমেন্ট অফিসগুলিতে আজ এর চাকরি যায়, কাল ও বদলি হয়, পরশু অন্যজন ওএসডি হয়, এইই চলছে। সালমান আলী সর্বাবস্থায় তেতে থাকেন। ঠান্ডা মাথায় ভদ্রলোক কখনো, কি আনুষ্ঠানিক কি অনানুষ্ঠানিক, কোনো মিটিং বা আলোচনায় কথা বলতে পারেন না। সর্বসময় উত্তেজিত। নিজে রাওয়ালপিন্ডির মানুষ, উর্দূ বলবেন, বলুন কিন্তু তিনি বাঙালিদের বাধ্য করেন অফিসে যেন সবাই উর্দূতে কথা বলেন। এমন কি, মিটিং ব্রিফিং নয়, দুই বাঙালি একে অন্যের সাথে বাংলায় কথা বললেও তিনি রেগে যান। মাঝে মাঝে কাউকে কাউকে গালাগাল পর্যন্ত করেন। তাঁর মতে উর্দূ হচ্ছে পবিত্র ভাষা, মুসলমানের ভাষা। শুধু পাকিস্তান নয়, ভারতবর্ষের সকল মুসলমানের উচিত উর্দূতে কথা বলা। বাংলা নাপাক ভাষা এবং এটা হিন্দুর ভাষা। এই ভাষায় কথা বললে ইমান হালকা হয়ে যায়।
ওদের ফিসফাস আলোচনা সালমান আলীর বেডরুমে পৌঁছে যায়। তিনি কি মেজাজ নিয়ে স্ত্রীর সাথে ছহবত করেন আকার-ইঙ্গিতে সেইসব কথা-বার্তা শুরু হয়। যে করণিকের নাম হুশেন মিয়া, বাড়ি কুমিল্লা, তিনি বলেন, ‘আসল জাগাত বিলাই, গিয়া দেহেন, মেঁও মেঁও করে। খালি আমডার লগে বেডাগিরি।’ তখন সবাই মুখ চেপে নাক দিয়ে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে মৃদু শব্দে হাসেন। যার বাড়ি বরিশাল, সিরাজ মাতুব্বর, তিনি হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠেন, ‘শফিউর, ও মিয়া, তুমি একলা ওইহানে বইয়া হরো কি? এম্মি আও, হেড স্যারে ডাকতে আছে।’ সিরাজের নির্বুদ্ধিতায় সকলেই জিভ কাটে, এদিক-ওদিক তাকায়। ফিসফাস করে ওরা সিরাজকে গালমন্দ করে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সিরাজ মাতুব্বর দুই হাতে নিজের কান চেপে ধরে। তখন ওর ঝাকড়া চুলের মাঝখানে বিশাল পদ্মফুলের মতো ফুটে থাকা ফর্শা মুখটিকে বড়ই করুণ দেখায়। সফিউর চেয়ার থেকে উঠে আড়াই প্যাঁচে নিব-কলমের ক্যাপ লাগিয়ে, কলমটাকে বুক পকেটে গুঁজে হাঁটতে থাকেন। ‘সিরাজ ভাই, আপনাকে অনেকবার বলেছি, আমার নাম সফিউর, শফিউর নয়, বরিশালের বাঙালই রয়ে গেলেন। জানেন তো মানুষের নামের উচ্চারণ ভুল করা মস্ত বড় অন্যায়।’
- আরে মিয়া থোও তোমার উচ্চারণ, বাংলা ভাষাই থাহে না।
আলোচনা তখন সালমান আলীর বেডরুম থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। বাংলা ভাষার মিছিলে দাঁড়িয়ে যায়। ‘শ্লোগান ওঠে, রাষ্ট্রভাষা রাষ্ট্রভাষা, বাংলা চাই বাংলা চাই’। চতুর্দিক থেকে মানুষ আসে মিছিলে। শত মাথা হাজার মাথা হয়ে যায়, হাজার মাথা লক্ষ মাথা হয়ে যায়, লক্ষ মাথা নিমিষেই কোটি মাথা হয়ে যায়। এইসব আওয়াজ ও আন্দোলন ঢাকা হাই কোর্টের হিসাব বিভাগের হলঘরে উচ্চারিত হয় না, শুধু একদল করণিকের বুকের ভেতর কষ্টের বিকট শব্দে ভেঙে পড়ে। সেইসব কষ্টের পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দানবের মত হুঙ্কার ছাড়েন সালমান আলী।
কোলকাতা থেকে হুগলী পনের ক্রোশ পথ। কাল রাতে কোলকাতা থেকে এক দ্রোহী কবি এসে উঠেছেন হুগলীর কোন্নগরে। কবির নাম কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁকে ঘিরে কোন্নগরে শুরু হয়েছে উন্মাদনা। যুবক কবি তাঁর বাবরি দুলিয়ে, শুভ্র পাঞ্জাবীর আস্তিন নাড়িয়ে, আবৃত্তি করছেন প্রস্তরখন্ডের মতো এক একটি শব্দ, সেই প্রস্তরখন্ডে ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে মানুষের বুকের ভেতরে নির্মিত কুসংস্কারের দেয়াল। তাঁকে ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে কোন্নগরে চলছে গান-বাজনা আর কবিতা পাঠ। কোন্নগর সাহিত্য-জোটের এক সদস্য হঠাৎ ভিড়ের ভেতর থেকে বলে ওঠেন, ‘আমরা ঠাকুরের কবিতা আর পড়তে চাই না, এখন থেকে আপনার কবিতা পড়ব। দেশ থেকে ইংরেজ খেদানোর জন্য আমাদের একজন কবি দরকার, আপনিই সেই কবি।’ পরের কবিতা পড়ার আগে কবি ভিড়ের ভেতরে দৃষ্টি ফেলে প্রশ্নকর্তাকে খোঁজার চেষ্টা করেন কিন্তু তাঁকে আর কোথাও দেখা যায় না। না দেখা গেলেও তিনি প্রশ্নের জবাব দেন। ‘স্বদেশী আন্দোলনে আমি আপনাদের পাশে আছি। আমার কবিতা কাজে লাগবে জেনে আমি আনন্দিত। তবে ঠাকুরের নিন্দে করবেন না। তিনি নির্মাণ করেছেন তাঁর জগত, আমি তৈরী করছি আমার জগত, দুজনের জগত আলাদা। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন আজ থেকে আটত্রিশ বছর আগে ১৮৮০ সালে, ঊনিশ বছর বয়সে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন্নগরে এসেছিলেন। আপনাদের এই অধম কবির বয়সও আজ ঊনিশ, কোন্নগরে প্রথম এসেছি। আজ আর কবিতা পড়বো না। সাহিত্য জোট হারমোনিয়াম আর তবলার ব্যবস্থা করেছে, আমি আপনাদের কিছু গান শোনাবো।’ কবির এই ঘোষণায় ভিড়ের মধ্যে একটি হর্ষধ্বনি ওঠে। যেন সকলেই মুখিয়ে আছে তাঁর গান শোনার জন্যে।
আয়োজকদের একজনের নাম মাহবুবুর রহমান। তিনি কবির পেছনে মঞ্চে বসে আছেন। এক তরুণ ছুটে এসে তাঁকে কানে কানে কিছু একটা বলে। তাঁর চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। গানের জন্য যখন মঞ্চ তৈরী করা হচ্ছিল তখন মাহবুব কবিকে বলেন, তাঁকে এখনই যেতে হবে, তাঁর স্ত্রী পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কবি তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে মুবারকবাদ দেন। মাহবুব বেশ বিনয়ের সাথে বলেন, কবি, আমার পুত্রের একটি নাম দিন। কবি কোনো কিছু চিন্তা না করেই বলেন, ‘সফিউর, সফিউর,/ ছুটে যাও বহুদূর/ হিমালয় থেকে সমতল/ করো উজ্জ্বল, রহো উচ্ছল’। ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মাহবুবুর রহমানের ঔরসে যে শিশুর জন্ম হয় হুগলীর কোন্নগরে তাঁর নাম রাখা হয় সফিউর রহমান।
সফিউর তাঁর চার বছরের কন্যা শাহনাজকে এই গল্প কেন শোনাচ্ছেন কে জানে। হয়ত তিনি শোনাতে চান শাহনাজের মা আকিলা খাতুনকে। জেনে রাখো, আমার নাম রেখেছেন বাংলার বিদ্রোহী কবি, আমাকে কেউ দমাতে পারবে না। লক্ষ্যে আমি পৌঁছুবোই। কিন্তু কি সেই লক্ষ্য?
- বাবা?
- হ্যাঁ, মা।
- কবি কি?
- কবি একজন মানুষ।
- তোমার মত?
- না মা, কবি অনেক বড় মানুষ, অ...নে...ক বড়।
- তোমার চেয়ে বড়?
- হ্যাঁ, আমার চেয়েও বড়।
- না, হবে না। মানবো না। আমার বাবা সবার চেয়ে বড়।
- এ কথা তোকে কে বলেছে?
- মা বলেছে।
বলেই শাহনাজ ওর ছোট্ট তর্জনিটি তুলে মায়ের দিকে তাক করে। এরপর খিলখিল করে হাসতে হাসতে ঘর পেরিয়ে ছুটে যায় সদ্য সিমেন্টে মোড়ানো তেলতেলে কালো রঙের পাকা বারান্দায়। আকিলা তখন মুচকি মুচকি হাসে। সফিউর আকিলা খাতুনের কাছে আসে। ওর গাঁ ঘেষে দাঁড়ায়। আকিলার রসে টসটসে ফর্শা গাল টিপে দিয়ে বলে, ‘তুমি আমাকে এতোটা বড় ভাবো!’ আকিলা লজ্জা পায়, ‘আপনার মেয়ে বানিয়ে বানিয়ে বলে আর আপনি তা বিশ্বেস করেন।’ আকিলা যখন লজ্জায় রাঙা হয় সফিউর তখন ওকে আদরে কাছে টানে, বুকে জড়িয়ে ধরে। নিজেকে সফির প্রশস্ত বুকে ছেড়ে দিয়ে আকিলা খাতুন বেহেশতে প্রবেশ করে।
রঘুনাথ দাস লেনের দুই পাশে সারি সারি বাড়ি। ছোটো ছোটো বাচ্চা-কাচ্চার কলকাকলিতে মুখর সরু গলিপথটি। দেশ ভাগের পর পশ্চিম বাংলা থেকে, আসাম থেকে, দলে দলে মুসলমান এসে উঠেছে পূর্ব বাংলায়, বিশেষ করে ঢাকা শহরে। নবীর উম্মত বাড়ানোর নীরব প্রতিযোগিতাও যেন শুরু হয়েছে অভিবাসী মুসলমানদের মধ্যে। অবিভক্ত ভারতের পূর্ব বাংলার পথেঘাটে এতো তরুণ দম্পতি ও ছোটো বাচ্চা-কাচ্চা দেখা যেত না।
সন্ধ্যার পরে দুপাশের বাড়িগুলো থেকে হাজারো উৎসুক চোখ নেমে আসে রঘুনাথ দাস লেনের গলির ওপর। ওরা অপেক্ষায় থাকে আলোর ফোয়ারা দেখার। চলমান এক আলোর ফোয়ারা সফিউরের বাইসাইকেল। এমন আলোকোজ্জ্বল বাইসাইকেল এর আগে এই অঞ্চলে কেউ দেখেনি। একটি বোতলের মতো ডাইনামো পেছনের মাডগার্ড স্ট্যান্ডের সাথে আটকানো, বোতলের মাথায় যে মেটালের ছিপি ওটাকে নামিয়ে চাকার সাথে যুক্ত করে দেয় সফি। যখন সাইকেল চলতে থাকে চাকার ঘুর্ণনে বোতলের ছিপি ঘোরে, তাতেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় এবং এই বিদ্যুতে আলোকিত হয় পুরো সাইকেল। প্রতিটি স্পোকের সাথে একটি করে বাল্ব লাগানো আছে। সামনের স্টিয়ারিং হ্যান্ডেলের মাঝখানে হেডলাইট। এ ছাড়া পেছনে রকেট সদৃশ এবং সামনে প্লেন সদৃশ দুই চাকার মাডগার্ডের দুপাশে, মাডগার্ডের একটু ওপরে, দুটি করে চারটি রঙিন বাতি। প্লেন দুটি নীল এবং রকেট দুটি লাল রঙের, এই চারটি বাতি যখন জ্বলে দুই চাকার স্পোকের সাথে লাগানো বাতিগুলো তখন নিভে যায়, আবার চাকার বাতিগুলো যখন জ্বলে প্লেন এবং রকেটগুলো তখন নিভে যায়। এভাবে জোনাকি পোকার মতো আলো জ্বেলে জ্বেলে এগিয়ে চলে সফিউরের বাইসাইকেল। এই অদ্ভুত আলোর ফোয়ারা শুধু রঘুনাথ লেনেরই না, পুরো ঢাকা শহরেরই বিস্ময়। অন্য লেনের বাচ্চাদের সাথে রঘুনাথ লেনের বাচ্চারা গর্ব করে বলে, এই আলোর ফোয়ারার মালিক রঘুনাথ লেন।
উপুড় করা সাইকেল-বেলের বাটির মতো একটি টিনের পট, তার পিঠে লম্বা একটি নল, নলের মাথা চোখা, পটটি উপুড় করে এর তলায় টিপ দিলে সিরিঞ্জের মতো তেল বের হয় নলের মাথা দিয়ে। সফিউর যখন কাজ থেকে ফিরে রোজ এক ঘণ্টা সময় নিয়ে সাইকেলের যত্ন করে, ছোট্ট শাহনাজ তখন এটি টিপে টিপে তেল বের করে সাইকেলে দেবার চেষ্টা করে। এটি ওর প্রিয় একটি খেলা। এর মূল কারণ হল এতে সে বাবাকে সাহায্য করতে পারছে। বাবার কাছে কাছে থাকতে পারছে। তখন তার রাজ্যের বায়না। আসল বায়না হল, বিকেলে সাইকেলে চড়িয়ে ওকে নিয়ে ঘুরতে হবে। সামনের ফ্রেমের সাথে ছোট্ট একটি সিট লাগানো আছে। মেয়েকে সামনে আর মেয়ের মাকে পেছনের ক্যারিয়ারে বসিয়ে প্রায় সন্ধ্যায়ই ওরা ঘুরে বেড়ায়, রঘুনাথ দাস লেন পেরিয়ে চলে যায় দূরে, দূরে। আহসান মঞ্জিল, ছোট কাটরা, হোসনি দালান, নর্থ ব্রুক হল রোড, পরী বিবির মাঝার, সদরঘাট, বুড়িগঙ্গার তীর আরো কত কত জায়গায় যায়। বাবা-মা ফিরতে চাইলে শাহনাজ বায়না ধরে আরো একটু থাকার, আসলে ও চায় যাতে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়, তাহলে সাইকেলের বাতিগুলো জ্বলে উঠবে। দর্শনীয় স্থান দর্শনে ওর আগ্রহটা যে উছিলামাত্র, ওর মূল আগ্রহ যে বাবার বাইসাকেলের আলোর ফোয়ারা, এটা তখনই বোঝা যায়।
অফিসে ঢুকেই টের পায় সফিউর বড় ধরণের কিছু একটা ঘটে গেছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে শোনে, লোকজন বলাবলি করছে ‘বরিশালের সিরাজ’, ‘বরিশালের সিরাজ’। কি হয়েছে সিরাজের? বুকের মধ্যে ধ্বক করে ওঠে সফিউরের। হিসাব বিভাগে উৎকন্ঠা, সফি ঢুকতেই হুশেন মিয়া নিজের সিট থেকে উঠে সফির পথ আগলে ওর মুখোমুখি দাঁড়ায়।
- হুনছেন দো খবরটা।
- না, শুনিনি, কি হয়েছে সিরাজ ভাইয়ের? অসুখ, এক্সিডেন্ট? খারাপ কিছু?
- দৈরা নিয়া গেছে। কাইল রাইতে বাসা থিকা অ্যারেস্ট করছে।
- কি করেছে সে?
- ভাষা আন্দোলনের লগে নাকি জড়িত।
তখন হাতের ইশারায় জমশেদ সাহেব ওদের দুজনকেই ডাকেন। দুজনই এগিয়ে যায় হেড ক্লার্কের ডেস্কের দিকে।
- সব বোগাস। কাল কসাইখানায় ডাক পড়েছিল না। সিরাজ নাকি চীফ একাউন্টেন্টকে পিন্ডিজির নামে উল্টাপাল্টা বলেছে। চিফের ব্যাপার তো তোমরা জানোই। এই অফিসে লেঙ্গুরে কুত্তা নাড়ে। যাও নিজের কাজ করো, এইসব নিয়ে আলোচনা যত কম করবা ততই ভালো।
সিরাজ মুখর, কিন্তু শাদা দিলের মানুষ। আন্দোলন করার মতো সাহস এবং বুদ্ধি কোনোটাই ওর নেই। আসল ঘটনা হলো সালমাল আলী। সিরাজ তাকে সহ্য করতে পারে না, কাজেই তাকে শাস্তি পেতে হবে। চিফ বাঙালি হলেও তাঁর মেরুদন্ড নেই, ডেপুটির কথায় উঠ-বস করেন। এর আগেও চিফের ঘরে যার ডাক পড়েছে তার কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছেই। চিফের রুমকে ওরা বলে কসাইখানা, ওখানে যাওয়া মানেই মুরগী জবাই।
সিরাজের স্ত্রীর দিকের আত্মীয় শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক। তাঁকে ধরে কোনো রকমে তিনদিন পর ছাড়া পেয়েছে সিরাজ। তার নামে তখন পর্যন্ত কোনো মামলাও হয়নি। থানা হাজত থেকে ফিরে এসে সিরাজ বোবা হয়ে গেছে। তার মুখ থেকে এখন আর কাজের কথাও বের হয় না। নিজের সিট ছেড়ে এক মিনিটের জন্য ওঠেও না। প্রয়োজনীয় কথা সে উর্দূতে বলে, অনেক শব্দের উর্দূই সে জানে না, সেই শব্দগুলো বাংলায় বলে, তবে তাঁর উর্দূতে যখন বরিশালের টান চলে আসে তখন সহকর্মীরা হেসে কিছুটা রসিকতা করতে চায়। সিরাজ তখনো হাসে না এবং কোনো প্রতিবাদ করে না। সিরাজ এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, সময়নিষ্ঠভাবে কোর্টের মসজিদে গিয়ে জোহরের নামাজ জামাতে আদায় করে। প্রায়শই নামাজের কাতারে সালমান আলীর সাথে দেখা হয়, সালমান আলী আজকাল সিরাজের খুব প্রশংসা করেন।
অফিসের কথা বাসায় কখনো বলে না সফিউর। কিন্তু এই ঘটনা সবিস্তারে খুলে বলে আকিলা খাতুনকে। একমাত্র উর্দূ পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হলে কী এমন ক্ষতি, এতোদিন এমন একটা ধারণা থাকলেও এখন সফিউরের মনে হয় বাংলা ভাষা পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা না পেলে হয়ত এমন দিন আসবে যখন এই ভাষায় লেখাপড়া তো দূরের কথা বাঙালিরা কথাও বলতে পারবে না।
সফি যখন এই কথাগুলো তাঁর স্ত্রীকে বলছিল, শাহনাজ তখন ওর কোলে, দুই হাতে বাবাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
- বাবা, রাস্তায় পুলিশ?
- না মা, রাস্তায় পুলিশ নেই।
- আমরা কি তাহলে বেড়াতে যাবো?
- আজ যাব না মা।
- কেন যাবো না?
- যদি পুলিশ থাকে।
- পুলিশ তো নেই।
- যদি চলে আসে?
- তুমি জোরে সাইকেল চালাবে। আমরা চলে আসবো।
- পুলিশের তো গাড়ি আছে।
- আমার বাবার সাইকেলের সাথে কেউ পারবে না।
- ঠিক আছে মা, দেখি। এখন যাও বারান্দায় খেলা করো গিয়ে।
মেঝেতে মাদুর পেতে ভাত ও ব্যাঞ্জন সাজিয়ে দেয় আকিলা খাতুন। একটি কাগজি লেবু কেটে টিনের পিরিচে রাখে, একটি ছোট্ট পেঁয়াজ আর দুটো কাঁচামরিচ পিরিচের একপাশে রাখতে রাখতে বলে,
- আপনি কিন্তু ওসব নিয়ে কিচ্ছু বলবেন না।
- কোন সব?
- ওই যে, ভাষা।
- চুপ করে থাকলে তো এই ভাষায় আর কোনোদিন কথা বলতে পারবো না।
- জান তো বাঁচবে।
- নিজের সব খুইয়ে বেঁচে থেকে লাভ কি?
- না, তবুও।
আকিলার কণ্ঠে প্রগাঢ় অভিমান।
- নুন দাও।
ডালের বাটি উপুড় করে ভাত মাখাতে মাখাতে বলে সফিউর।
- আমি চাই না আমার মেয়ে উর্দূ ভাষায় কথা বলুক।
আকিলা খাতুন সফিউরের চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। এমন ক্রোধ আর কখনো দেখেনি সে তাঁর স্বামীর চোখে। তখন ওর মনে হয়, এই সেই সফিউর যার নাম রেখেছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
ছিপছিপে এই লম্বা যুবকের নাম আবদুল মতিন। ভিড়ের মধ্যে সে একজন মাত্র নয়, বিশিষ্ট একজন, হাজার জনতার মধ্যেও ওকে আলাদা করে চেনা যায়। ওর উঁচু মাথা আরো অনেক উঁচুতে আজ। হাতে একটি কাগজ, একুশে ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে ২২ তারিখের বিপ্লবী কর্মসূচী, যার অংশ হিশেবে একুশ তারিখে নিহতদের গায়েবী জানাজাও রয়েছে। যুবক এসে দাঁড়ায় সম্মিলিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক কাজী গোলাম মাহবুবের সামনে।
- মাহবুব ভাই এটা সই করে দিন।
- কি এটা?
- গায়েবী জানাজাসহ আগামীকালের কর্মসূচী, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের স্বাক্ষরেই এই কর্মসূচী পরিচালিত হবে।
- তোমার কি মাথা খারাপ।
ধমকে ওঠেন গোলাম মাহবুব।
- তোমাদের ভুলের জন্য এতোগুলো প্রাণ গেল আজ। এর দায় সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ নেবে না। আমি কিছুতেই এই কর্মসূচীতে স্বাক্ষর করে তোমাদের ভুলের দায়-দায়িত্ব নেবো না।
- আন্দোলন এখন যে পর্যায়ে আছে পেছনে ফেরার আর সুযোগ নেই। আপনি সই করুন।
- তুমি কি আমাকে হুকুম দিচ্ছো? কিছুতেই আমি সই করবো না। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল ও হঠকারী। তোমরা সম্মিলিত রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্ত অমান্য করেছো। তোমাদের এই আন্দোলনের সাথে আমি এবং আওয়ামী মুসলিম লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।
কিছুটা বিক্ষিপ্ত, রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ মতিন। হাতে গায়েবী জানাজাসহ ২২ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচী। একটু সময় চিন্তা করেই মতিন বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিশেবে কর্মসূচীতে সই করে দেন। এর সাথে সাথেই মৃত্যু ঘটে ৩১ জানুয়ারি ১৯৫২ তারিখে গঠিত তিন সপ্তাহ আয়ুষ্কালের সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের।
ঢাকা শহরের চারটি প্রেস থেকে ছাপা হয় কর্মসূচীর লিফলেট। সারারাত ধরে চলে বিলি বন্টন। একটি অন্যরকম সকালের প্রতীক্ষায় ঢাকার মানুষ। পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, সচেতন মধ্যবিত্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, কিছু একটা হবে। এই পাকিস্তান ছাত্ররা মেনে নেবে না। ছাত্ররা রাজপথে নেমে এসেছে, এবার কিছু একটা হবে। কেবল ওরাই পারবে একটা কিছু করতে।
রফিকের মাথার খুলি উড়ে গেছে, জব্বারের বুক ফুটো হয়ে গেছে, বরকতের তলপেট থেকে নেমে এসেছে তাজা রক্তের ধারা। ঢাকার রাজপথ এখন ভাষা শহিদদের রক্তে লাল। ভাষা শহিদদের মৃতদেহ এখনো পুলিশের দখলে। রাতভর চেষ্টা তদবীর করেও লাশ পাওয়া যায়নি। তাই গায়েবী জানাজায় শরীক হতে ভোর থেকেই জনতা রাজপথে নেমে আসছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিলের স্রোত আসতে শুরু করেছে।
ঘুম থেকে উঠে আজকের সকালটি অন্যরকম লাগে আকিলা খাতুনের। একটি দাঁড়কাক উঠানের আমগাছে বসে খাঁ খাঁ করে ডাকছে। বাপ-বেটি মাদুর বিছিয়ে মেঝেতে বসেছে নাশতা খেতে। আকিলা খাতুন কেরোসিনের স্টোভে পরোটা ভেজে ওদের পাতে তুলে দিচ্ছেন। নিজের খাবার রেখে শাহনাজের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে সফিউর।
- মেয়েকে নিজের হাতে খেতে দেন, খাওয়া শিখুক। আপনার পরোটা ঠান্ডা হয়ে গেল তো। আপনি খান।
- খাবো, খাবো। আগে আমার আম্মাজানকে খাওয়াই।
সফি এক হাতে মেয়ের মুখে খাবার তুলে দেয় আর অন্য হাতে মেয়েকে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে, গালে চুমু খায়। মেয়েটিও আহ্লাদি, বাপের বুকের সাথে লেপ্টে থাকতে চায়। মা ধমকে ওঠেন,
- মুখ সরাও, বাবার জামা নষ্ট হয়ে যাবে তো।
কিছুটা বিরক্ত হয়ে সফিকে বলে আকিলা খাতুন –
- হয়েছে তো, এখন রাখেন। ওকে নিজের হাতে খেতে দেন। চার বছর বয়স হয়েছে, শিখতে হবে না? আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় তোলার দরকার নেই।
খাওয়া বন্ধ করে শাহনাজ মায়ের দিকে কটমট করে তাকায়।
- আমি বাবার হাতেই খাবো।
- অবশ্যই আমার মেয়ে বাবার হাতে খাবে।
আকিলার দিকে তাকিয়ে বলে সফি,
- এতো তাড়ার কি আছে? আমাদের একটিমাত্র মেয়ে, না হয় আমি সারাজীবন মেয়েকে মুখে তুলেই খাওয়াব। যখন আমি থাকব না, তখন ও নিজের হাতে খাবে।
- ধ্যাৎ সাত-সকালে কি সব অলুক্ষুণে কথা।
তখন ধরাম করে একটা শব্দ হয়। বারান্দার হাফ দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে রাখা সাইকেলটি পরে গেছে। সফি এবং শাহনাজ দুজনই উঠে দৌড় দেয়। শাহনাজ এবং সাইকেল এই দুটোই সফির জান। স্পোকের কয়েকটি বাল্ব ভেঙে গেছে। সামনের একটি প্লেন বাঁকা হয়ে গেছে। সফির খুব মন খারাপ হয়। সে খাওয়া রেখেই কাঠের মিটসেফের ড্রয়ার থেকে খুঁজে খুঁজে কয়েকটি লুজ বাল্ব বের করে। সফি যখন স্পোকের বাতিগুলো রিপ্লেস করছিল আকিলা খাতুন তখন ফুলের ঝাড়ু দিয়ে ভেঙে যাওয়া বাল্বের কাচগুলো সাফ করে।
- আজ অফিসে না গেলে হয় না?
- না হয় না।
- কালকের গোলাগুলির কারণে আজ যদি আবার মিছিল টিছিল হয়। আমার ভয় করছে।
- ভয়ের কিছু নেই, আমার সাইকেল আছে না। ঝামেলা দেখলে সাঁই করে চলে আসবো। দরকার হলে আমার পঙ্খিরাজকে বলবো, উড়ে চলো তো বেটা। কি বল মামনি?
শাহনাজ দুই হাত ফ্ল্যাপ করে তিন কদম এগিয়ে বলে, ‘সাঁই...’
তিনবার সুরা এখলাস পড়ে স্বামীর বুকে ফু দিয়ে, ‘ফি আমানিল্লাহ’ বলে দরোজা বন্ধ করে আকিলা খাতুন।
সফিউর কিছুটা উত্তেজিতও। সব কথা সে আকিলাকে বলেনি। দরকার হলে আজ অফিসে যাবে না কিন্তু মিছিলে যাবে। বাংলা ভাষার দাবী আদায়ের এই সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। অফিসে গেলেও ছুটির পরে সবাই মিলে মিছিলে যাবে এইরকম একটি সিদ্ধান্ত হয়ে আছে। এসব ভাবতে ভাবতে সফিউরের বাইসাইকেল নবাবপুর রোডে এসে ওঠে। দূর থেকেই শ্লোগানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এখানে এসে দেখে হাজার হাজার মানুষের বিশাল শোক মিছিল। সফিউরের ইচ্ছে হয় এক্ষুনি মিছিলে যোগ দিতে কিন্তু সাইকেলটি কোথায় রাখবে এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। সাইকেল থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে সমবেত জনতার দিকে এগুতে থাকে সফিউর। হঠাৎ ঠা ঠা ঠা ঠা রাইফেলের গুলির আওয়াজ। পেছন থেকে একটি গুলি এসে লাগে সফিউরের পিঠে। সকাল তখন দশটা, কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সফিউর মাটিতে লুটিয়ে পরে, ওর হাত থেকে সাইকেলের হ্যান্ডেল ছুটে যায়, সাইকেলটি মাটিতে পরে যায়, বুঝি আবারো কয়েকটি স্পোকের বাতি ভেঙে গেল।
২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, রাত আটটা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অপারেশন থিয়েটারে ডা. এলিংসন আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন সফিউরের জীবন বাঁচাতে। আড়াইঘন্টা পর ফিরে এসে যখন তিনি তাঁর ব্যর্থতার কথা জানান, সফিউরের পিতা এবং ভাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ডাক্তার এলিংসন বলেন, রাইফেলের গুলির আঘাতে ভিকটিমের কলিজা ছিঁড়ে গিয়েছিল। মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় পুলিশ বিভাগ।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬। গতকাল পাকিস্তানের জায়ীয় গণপরিষদ উর্দূ এবং বাংলা এ দুটি ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিশেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করে।
নয় বছরের এক শিশুর সামনে একটি খবরের কাগজ। কাগজের নাম দৈনিক আজাদ। শিশুটি পত্রিকার প্রধান শিরোনামের সংবাদটি পড়ছে, ‘পাকিস্তানের জাতীয় গণপরিষদ গতকাল ২৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করিয়াছে। ১৬ই ফেব্রুয়ারী গণপরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাবটি গ্রহণের মধ্য দিয়া বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামের অবসান ঘটিল। আজকের এই দিনে জাতি শ্রদ্ধাভরে বাঙালির ভাষা শহীদ রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সফিউরকে স্মরণ করিতেছে...’ শিশুটির চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে, সেই অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে বাংলা বর্ণমালা। শিশুটির নাম শাহনাজ রহমান।
হলিসউড, নিউ ইয়র্ক। ১৯ জুন ২০১৭।
Comments
Post a Comment