Skip to main content

কাজী জহিরুল ইসলামের গান || কাবেরী দাশ

এই গানটি কে সুর করবেন

 

|| কাবেরী দাশ ||  




 

লুকিয়ে তাকে যতোই রাখো 

লুকোনো তো যায় না

সে যে মনের ছবি মনেই থাকে 

মনেরই সে আয়না।।

 

মেঘে মেঘে বাড়ছে বেলা 

মেঘের বয়স বাড়ে না

মেঘের সাথে বেলার আড়ি 

মেঘ বেলাকে ছাড়ে না

চক্ষু মুদে কেউ তারে পায়

চোখ খুলে কেউ পায়না।।

 

জলের নিচে ডুবে আছি 

চারিধারে জলের ঢেউ

জলে বসত জলেই রসদ 

তবু কি জল দেখে কেউ?

তৃষ্ণাতে বুক ফাটে তবু 

এ জল তো কেউ চায় না।

 

ফেইসবুকের মাধ্যমে চমৎকার এই গানটি সুর করার আহ্বান জানালেন গানের রচয়িতা। তখন রচয়িতার সঙ্গে তেমন চেনাজানা নেই। নাম শুনেছিমাঝে মধ্যে টেলিভিশনে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনা শুনেছি। 

 

কিছুদিন পর ক্লাব সনম এ নিউইয়র্কের বিশিষ্ট্য অনেক কবির সদ্য প্রকাশিত বইয়ের প্রকাশনা উত্সব ছিল। আমার কন্যা পারমিতার মুমুরও সংগীত শিক্ষা বিষয়ক একটি বই "আরোহন" নিয়ে আলোচনা ছিল। সেখানেই দেখা হল বিশিষ্ট্য কবি কাজী জহিরুল ইসলাম ও তার গুণবতী স্ত্রী মুক্তি জহিরের সঙ্গে। 

 

তিনি তাঁর গানটি সুর করার আহ্বান জানানোর পর ফেসবুকে আরো অনেকে সুর করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সহজ সরল অথচ খুব গভীর ভাবার্থের গানটি আমারও ভীষণ ভালো লেগে গেল। সুর করার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তিনিও স্বানন্দে রাজী হয়ে গেলেন। বললেন আর কাউকেই সুর করতে দেবেন নাআমিই যেন করি।

 

তারপর তো আরো বিপদের সম্মুখীন হলামকারণ গান গাই গান শেখাই কিন্তু গানের কথায় সুর বসানোর মত কঠিন কাজ তেমন করা হয়নি আর চেষ্টাও করিনি। মনে মনে ভাবছিলামকেন যে নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মারতে গেলাম। 

 

সুর করার চেষ্টা করতে করতে পুরনো কিছু অভিজ্ঞতা কাজে লাগালামআর সেই প্রসঙ্গেই মজার এবং শিক্ষনীয় একটি স্মৃতি মনে পড়ে গেল। কারণ গানের ব্যাপারটি এলেই আমার বাবার প্রসঙ্গ চলে আসে। অনেক আগের ঘটনাআমি তখন কলেজে পড়ি। সিলেট বেতারে "দূর্গা পূজা উপলক্ষে" একটি গীতি আলেক্ষ্যের জন্য কিছু গানের সুর করার দায়িত্ব পান বাবা কিন্ত জরুরী কাজে বাবাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হবে তাই আমাকে গানে সুর করে রাখার দায়িত্ব দিয়ে যান। বরাবরই বাবাকে খুব ভয় পেতাম তাই কোন প্রকার অজুহাত দেখানোর সুযোগই ছিল না। অনেক চেষ্টা করতে থাকলাম কিন্ত তেমন কিছুই হচ্ছিল না। জীবনে প্রথমবার গানের সুর করা নিয়ে কথা  পরে ভাবলাম বাবা শাস্ত্রীয় সংগীতের মানুষতাকে খুশী করার জন্য যত্ন সহকারে বিভিন্ন রাগরাগিনী দিয়ে বেশ কঠিন করে গানগুলোতে সুরারোপ করলাম। ভেবেছিলাম যত কঠিন হবে ততই বুঝি বাবার পছন্দ হবে। 

 

কিন্ত ফল যা হবার তাই হলো। বলছিলেন সব গান একই ধাঁচের হয়েছে। সব ক্লাসিক। আমার মন খারাপ হবে তাই তিনি একটি গান রেখে বাকী সবগুলোর জন্য ঝটপট সহজ সরল চমৎকার কিছু সুর করলেন। ভাবছিলাম বাবা কি করে এত সহজে এত অসাধারণ সুর করেন। পরে তিনি আমাকে একটি কথাই বলেছিলেনগানের সুর হবে সহজ সরল এবং লোকজ। খুব কঠিন সুর সহজে হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারে না। লোকজ সুর হলো আমাদের প্রাণের সুরপ্রকৃতি থেকে বয়ে আসা সুর কখনো পুরনো হয় না। 

 

যাই হোক কাজী জহিরুল ইসালাম একজন স্বনামধন্য কবি। তাঁর গান সুর করার সময় বাবার কথা মাথায় রেখেই করেছি। আবার সেই রাগ রাগিনী। ইমন রাগকে বেছে নিলাম। তবে খুব সহজ সরল ভাবেই করার চেষ্টা করেছি। গানটিতে সুর সংযোজনের আগে কবির মতামত জানতে চাওয়ায় তিনি লোকজ এবং সুফি ঢঙয়ের কথা জানালেন।

 

গানটির মর্মার্থ সুফিবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই ইমন রাগের উপর কাহারবা তালে গানটি সুর করি।  সুর করার মাত্র একদিন পরেই একটি টিভি চ্যানেলে আমার একক সংগীতানুষ্ঠানে এই গানটি পরিবেশন করি। সবাই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছিলেন সেদিন। তখন মনে হয়েছিলবাবার উপদেশবাণী জীবনে দ্বিতীয়বার চমৎকার এই গানটি সুর করার ক্ষেত্রে আমি হয়ত প্রয়োগ করতে পেরেছি। 

 

অসাধারন একটি গানে সুর সংযোজন করার সুযোগ করে দেবার জন্য কবি কাজী জহিরুল ইসলামকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি তাঁর অর্ধশত কবি জীবনের সাফল্য কামনা করছি। তাঁর লেখনী সমৃদ্ধ থেকে সমৃদ্ধতর হোক এবং সারা বিশ্বে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক এই কামনা করছি।

 

নিউ ইয়র্কযুক্তরাষ্ট্র। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭। 

Comments

Popular posts from this blog

শিল্পী কাজী রকিবের সাক্ষাৎকার

নন-একাডেমিক শিল্পীরাই নতুন কিছু দেয় -    কাজী রকিব  [কাজী রকিব বাংলাদেশের একজন গুণী শিল্পী। রাজশাহী আর্ট কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক। কলেজের প্রথম ক্লাসটি নেবার কৃতিত্বও তাঁর। নিরন্তর ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান ভাবনার ছবি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সস্ত্রীক বসবাস। তার স্ত্রী মাসুদা কাজীও একজন গুণী শিল্পী। বৈচিত্রপ্রিয় এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ধারাবাহিকভাবে তা এখানে প্রকাশ করা হবে। আজ উপস্থাপন করা হলো প্রথম পর্ব।]   জহিরুলঃ  বেশিরভাগ শিল্পীই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেন ,  নিজস্বতা যাকে আমরা বলি। আবার কেউ কেউ একই ধরণের ছবি বারবার আঁকেন। আপনার কাজে বৈচিত্র খুব বেশি ,  এতে করে "টাইপড" অপবাদ থেকে আপনি মুক্ত কিন্তু নিজের একটি স্টাইল তৈরি করতে না পারা বা তৈরি হয়নি বলে কি আক্ষেপ হয় ,  নাকি এই যে ভার্সেটিলিটি এটাই আপনি বেশি উপভোগ করেন ?    রকিবঃ   আমি আসলে আলাদা করে ভাবিনি এই স্টাইল বিষয়ে। কারো মতো আঁকারও চেষ্টা করিনি তেমন ভাবে। অল্প বয়সে ,  আমার ১৯ / ২০ বছর বয়সে ,  সালভাদর দালির মতো আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন ।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে এবং সংশোধনী প্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার - তৃতীয় পর্ব

মঞ্জু আমার ওপর রাগ করেছে                                                           - আল মাহমুদ [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের  তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]  সাক্ষাৎকার নেবার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু  ও কাজী জহিরুল ইসলাম। ওয়ান্টাগ পার্ক, নিউ ইয়র্ক।  ছবি তুলেছেন ড. মাহবুব হাসান।   জহিরুলঃ  খুশবন্ত সিং তার সকল বই অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি দিলেন আপনাকে এবং সেই অনুমতিপত্রটি তিনি নিজ হাতে আপনার সামনেই বাংলায় লিখে দিলেন। তিনি কিভাবে বাংলা শিখলেন তা কি জানতে পেরেছিলেন ?  মঞ্জুঃ    জ্বি ,  ঘটনাটি  ঘটে  ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ,  এ সম্পর্কে আমি আগের এক প্রশ্নে বলেছি। তারিখটি আমার স্মরণে নেই। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ,  ডিসেম্বরের শেষ দিকে। না ,  বাংলায় নয় ,  উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। আমার কফি পানের সময়ের মধ্যেই লিখে দিয়েছেন। ১৯৮৪ থেকে মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমাকে তিনটি বা চারটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন বলতে আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রতিটি চিঠি ইংরেজিতেই লিখেছেন। প্রতিটি চিঠিতে আমাকে সম্বোধন করেছেন  “ আনোয়ার ভাই ,”  বলে।