অভিনন্দন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম!
|| অশোক কর ||
এই, বাড়ি আছ?
ফোন বাজছে ধরছ না যে
ব্যস্ত না-কি নানান কাজে?
শেলফে রাখা পুরোনো সব গ্রন্থগুলো
নেড়েচেড়ে ঝাড়ছো বুঝি স্মৃতির ধুলো...
পড়েছি বইতে, ফেসবুকে, বাচিকের করা আবৃত্তি শুনেছি, শুনেছি কবির নিজের কন্ঠে; সবার মন ছুঁয়ে যাওয়া ছন্দমধুর নস্টালজিক কবিতা, কবিরও যথেষ্ঠ পক্ষপাত কবিতাটির প্রতি। ছন্দে লেখা, একটু পুরোনো গন্ধও জড়ানো তাতে, তবু পড়লে বা শুনলে মনের কোথায় যেন অবশেষ থেকে যায়, মনে আঁকা হয়ে যায় অটোগ্রাফ, "কাজী জহিরুল ইসলাম", আমাদের কবি! পেরিয়েছেন পঞ্চাশ, এর মধ্যেই প্রকাশ করেছেন কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ, স্মৃতি মিলিয়ে ৪৩টি পুস্তক! কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের শুরু ১৯৯৪ থেকে।
প্রতিভাবান কবি কাজী জহিরুল ইসলাম সত্যিই অসাধারণ! চৌকষ এই মানুষটির শিল্পসৌকর্য্য আর বিশ্ববিক্ষার সাথে পরিচয় না হলে আধুনিক বিশ্বমাত্রিক বাংলা কবিতা সম্ভার আমরা মিস করবো। তাঁর সাম্প্রতিক লেখায় বাংলা কবিতার এক নতুন মাত্রা খুবই বুদ্ধিবৃত্তির পরিচায়ক রূপে বাংলা কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে...
ত্রিশটি সপ্রাণ আপেলের সাথে আজকাল সখ্য গড়ে উঠেছে আমার
অরিয়ানা ফালাচির বিতর্ক ছাপিয়ে ওরা
মাঝে মাঝে ত্রিশ লক্ষ হয়ে যায়।
শৈশবের আদুরে স্বভাব ছেড়ে গুটি বেঁধেছে কৈশোরে,
কোনোটা সবুজ, কেউ লাল, আবার কারো গা থেকে
ঝরে পড়ে স্বর্ণালি সুন্দর।
ওদের সতেজ সভাটিকে মাঝে মাঝে মনে হয়
জ্যাকসন হাইটসের সম্প্রীতি
বহু বর্ণের নির্ভয় কিশোরীদের অবাধ হাঁটাচলা
বুকে সাহসের সহাস্য আপেল
আর ওদের চুমুকাঙ্ক্ষিক ঠোঁটে অবিভক্ত পৃথিবীর হাসি।
প্রতিদিন সকালে ওদের সাথে আমার নিয়ম করে
অতীব গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা হয়
ওরা আমাকে জানায় ওদের গোপন পরিকল্পণার কথা
ভালোবাসার প্রত্যয় নিয়ে ওরা স্ফীত হতে থাকে প্রতিদিন।
কিন্তু আমি জানি ওরা প্রস্তুত বিস্ফোরণের জন্যেও।
(কবিতাঃ ত্রিশটি আপেল, কাবতগ্রন্থঃ রাস্তাটি ক্রমশ সরু হয়ে যাচ্ছে)
কবিতার নতুন প্রকরণের অন্বেষণে কবি কাজী জহিরুল ইসলাম সদা সক্রিয়, বিদেশে থেকেও প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলা কবিতার সমৃদ্ধি জন্য। "ক্রিয়াপদহীন কবিতা" সেই সপ্রতিভ প্রচেষ্টার সাক্ষর। কবিতার শরীর থেকে সচেতনে ক্রীয়াপদ ছেঁটে ফেলে কবিতাকে ঋজু কিন্তু নান্দনিক উপস্থাপন করার সচেষ্ট প্রয়াস তাঁর লেখা থেকেই আসে প্রথম। বাংলা কবিতার এই পদ্ধতিগত উত্তরণ বাংলা কবিতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে, নিচের কবিতাটি তার বিশিষ্ট উদাহরণ:
যুবকের দীর্ঘশ্বাসের তাপে বর্তমান সময়টা ধুসর, বিবর্ণ
দরোজার বাইরে যখন পা, কখনো না কখনো
তাতে জলকাদার ছোঁয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা, নয় কি?
অথচ ওর চোখে কেবলই পিচঢালা পাকা রাস্তা আর দ্রুতগামী গাড়ি
আর প্রায়শই ওর দীর্ঘশ্বাসের ধোঁয়ায়
পশ্চাদমুখীতার মতো ভয়ঙ্কর অভিশাপ
প্রকৃতপক্ষে বিষয়টি ওর অজ্ঞাত যে পথের কোনো পশ্চাদ নেই,
সকল রাস্তারই লক্ষ্য সামনের দিকে...
(কবিতাঃ যুবকের দীর্ঘশ্বাস, কাব্যগ্রন্থঃ ক্রিয়াপদহীন ক্রিয়াকলাপ)
সত্যিই; সকল রাস্তারই লক্ষ্য সামনের দিকে...তবু কাউকে না কাউকে দায় কাঁধে তুলে নিতে হয় পথকে মসৃণ, সাবলিল করে রাখা পথচারীদের জন্য। কাজী জহিরুল ইসলাম বাংলা কবিতার উত্তরণের পথটিকে প্রবাসী বাঙালীদের কাছে প্রসারিত করার সাংগঠনিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর "স্বপ্নশিকারি" আন্দোলনের মাধ্যমে, টিভি শিল্প-উপস্থাপনার মাধ্যমে। বাংলাপ্রেমী এমন একজন কর্মনিষ্ঠ জনের পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তিতে অভিনন্দন!
ফ্লোরিডা, যুক্তরাষ্ট্র। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭।
Comments
Post a Comment