Skip to main content

দূর থেকে দেখা কবি || সজল আশফাক

দূর থেকে দেখা একজন আপাদমস্তক কবির ডিসেকশন

 

|| ড. সজল আশফাক || 




 

 

কাজী জহিরুল ইসলামএকজন কবি। একজন খাঁটি বাংলাদেশী। কিন্তু জহির ভাইকারো সাতে নাই পাঁচে নাই গোছের মানুষ এবং কবি। নিউ ইয়র্কে আসার আগে ওনার সাথে কখনো পরিচয় হয়েছিল কী না জানি না। তবে ওনার অনেক বন্ধুই আমার পরিচিতকেউ কেউ আমারও বন্ধু। নিউ ইয়র্কে আসার পর পরিচয়টা গাঢ় হয়। কিন্তু পরিচয়ের সূত্র ফেসবুক। ফেসবুক অনুযায়ী ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের মধ্যে কেউ একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইঅন্যজন একসেপ্ট করি।  

 

ফেসবুকের মাধ্যমেই অজান্তে তার সাহিত্যকর্ম এবং এ বিষয়ক ক্রিয়াকলাপের পরিচয় ঘটতে থাকে। নিউ ইয়র্কে ২০১৬ এর বইমেলায় প্রথম দেখা, তারপর পরিচয়। কাজী জহিরুল ইসলাম যখন বাংলাদেশে ছিলেন তখন থেকেই লেখালেখির ব্যাপারে একাগ্র। নিউ ইয়র্কে আসার পর তার সাহিত্যকর্ম মোটেই স্থবির হয় নি বরং বেগবান হয়েছে। নতুন অভিজ্ঞতায় কবিতা আরো শাণিত হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে ইতোমধ্যে তিনি অসাধারণ এক পরিমন্ডল গড়ে তুলেছেন তিলে তিলে। এই সাহিত্য পরিমন্ডল গড়ে তোলার পেছনে বাস্তব জগতে তার সময়সাপেক্ষ নিষ্ঠা এবং কর্মযোগ যেমন ভূমিকা রেখেছে তেমনি ফেসবুকে তার কর্মকান্ডের অকপট প্রকাশ অনেককেই ভিন্নভাবে সংযুক্ত করেছে। ঊনবাঙাল নামক প্লাটফর্মের মাধ্যমে তিনি নানারকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড করে যাচ্ছেন। এই কাজগুলো করা মোটেই সহজ নয়। প্রবাস জীবনে দুরূহ এই কাজটি করার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার নেই। 

 

কিন্তু কথা হচ্ছে তিনি যা-ই করছেন সাহিত্য নিয়ে তারমধ্যে খুব সহজেই একজন নিবেদিত প্রাণ সাহিত্যপ্রেমীকে উপলদ্ধি করা যায় সহজেই। তার অনেক কর্মকান্ডের একটি “স্বপ্নশিকারি”। অনেক প্রতিভাবান মানুষকে তিনি প্রবাসে আপন সাংস্কৃতিক বলয়ে গেঁথে রাখতে পেরেছেন। তার সাথে কোথাও বসে বা দাঁড়িয়ে কখনো ৫ মিনিট আড্ডা হয়নি। করমর্দন,  হাই-হ্যালোবড় জোর কেমন আছেন,  কেমন চলছে জাতীয় কথা হয়েছে। তারপরও তাকে খুব অল্পসময়ের মধ্যেই কাছের মানুষ মনে হয়েছে। এই মনে হওয়ার পেছনে তার সহজ সরল কবিমনঅন্যের প্রতি শ্রদ্ধাববোধই আমার কাছে অগ্রগণ্য বলে মনে হয়েছে। সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতাঅসহিষ্ণুতা  ও বিষোদগার বর্ষণের এই অসুস্থ বলয়ের বাইরে একজন শান্তসৌম্যহাস্যোজ্জ্বল কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। 

 

তার লেখা আমি পড়েছিঅনেক বেশি পড়িনিকিছু কিছু পড়েছি। তার লেখায় তিনি সবসময় নতুনমাত্রা যোগ করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর কবিতা দাবী করে বিশদ বিশ্লেষণ, স্বল্প পরিসরে তা বলা সম্ভব নয়। শুধু এইটুকু বলা উচিতকবিতায় এই সময়ে যারা নতুন মাত্রা ও চলমান আধুনিকতা যোগ করার চেষ্টা করছেন তিনি তাদেরই প্রতিভূ। কাজী জহিরুল ইসলামের মূল কাব্যশক্তি তার মেধামননদৃষ্টিভঙ্গি,  স্বকীয় দর্শন আর আন্তরিকতা। তার উপস্থাপনায় নিজস্বতা আছে। 

 

কিন্তু আমি জানি না উনিকীভাবে আমাকে চেনেনকেন চেনেনকাজী জহিরুল ইসলামের অগণিত গুণমুগ্ধের মধ্যে আমিও হয়তো একজন। কিন্তু ওনার মত  গুণী ব্যক্তিকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কিছুটা বিব্রতবোধ করছিএই ভেবে যেআমি সামান্য মানুষ তাকে নিয়ে কী-ই বা লিখবো। কানেকশন একটাইতা হলে কবিতা। কবিতা আমিও লিখেছি এবং লিখছি,  কিন্তু সংখ্যায় খুবই কম। অল্প কিছু কবিতা লেখক-সম্পাদকের সম্পাদনা পেরিয়ে সাহিত্যপাতায় জায়গাও পেয়েছে। তাই বলে কাজী জহিরুল ইসলামের মত নিয়মিত লেখকসপ্রতিভশিক্ষিত লেখকের লেখার বিশ্লেষণ করার স্পর্ধা আমার নেই। ইতিবাচক দিকগুলোর অতি সামান্যই আমি প্রকাশ করতে পেরেছি এই কবি সর্ম্পকে। 

 

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম ৫০ পেরিয়েছেনতিনি জীবনের টেস্ট ম্যাচে আরও রান করবেন। আমার মত অনেক দর্শক তার চৌকশ পারদর্শীতা দেখার জন্য গ্যালারিতে অপেক্ষায় থাকবো।

 

নিউ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭।

Comments

Popular posts from this blog

অসাধারণ এই শিল্পীর জীবনের গল্প বড় করুণ

  [এই সময়ের অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী সারফুদ্দিন আহমেদ। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। আর্ট কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ,  আর শুধু ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান বিষয়ের ছবি। সারফুদ্দিন আহমেদের ছবি থেকে চোখ ফেরানো যায় না ,  আপনাতেই ওঁর নান্দনিক সৃষ্টিকর্মে দৃষ্টি আটকে যায় ,  কী জল রঙ ,  কী অ্যাক্রিলিক ,  কিংবা স্রেফ পেন্সিলের ড্রয়িং। এই গুণী শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি এখানে উপস্থাপন করা হলো।]       ভারত আমাকে চোখ দিয়েছে ,  বাংলাদেশ দিয়েছে দৃষ্টি -     সারফুদ্দিন আহমেদ     কাজী জহিরুল ইসলামঃ  ব্যাক গ্রাউন্ডে তবলা বাজছে আপনি ছবি আঁকছেন কাচের ওপর।    এই যে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ছবি আঁকা, এই ছন্দটা ছবিতে কিভাবে ধরেন? আর কোনো শিল্পী ছবি  আঁ কার সময় যন্ত্রানুসঙ্গ ব্যবহার করেছেন?   সারফুদ্দিন আহমেদঃ   কাঁচ নয়,   এটি এক বিশেষ ধরনের কাপড়-নেট। এই নেটের উপরে বর্তমানে আমার এক্সপেরিমেন্ট চলছে।    জহিরুলঃ ও ,  ফেইসবুকে যখন ছবিটি দেখি কাচের মতো ...

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা || আবুল কাইয়ুম

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা: জাতীয়-বৈশ্বিক মেলবন্ধন   || আবুল কাইয়ুম ||    কবি যদি হন বিশ্বপরিব্রাজক ,  তবে তিনি তো কবিতায় আঁকবেন তাঁর দেখা দুনিয়ার ছবি। বৃহত্ত্বকে আশ্লেষ করার পরিণামে স্বাভাবিকভাবে তাঁর মধ্যে জন্ম নেবে মানবিক মহত্ত্ববোধ ,  তা যে কাব্যাদর্শের লাঠিতে ভর করেই হোক। আশির দশক থেকে ক্রমবিকশিত কবি কাজী জহিরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি । পর্যাপ্ত বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতায় আলোকিত হয়েছেন বলেই তিনি যে কোনো সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে নিজেকে উদারনৈতিক মানবিক চৈতন্যে সংগঠিত করতে পেরেছেন ,  বিশ্বমানবতা ও বিশ্বশান্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত রেখেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে জড়ো হয়েছে বৃহত্তর সমষ্টিচেতনা ,  তাঁর প্রেম ও প্রার্থনা মানব কল্যাণের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে। তার লেখনীতে নানা দেশের মানুষের জীবন ,  সংস্কৃতি ,  প্রেম ,  ত্যাগ ও সংগ্রামের চালচিত্র কীভাবে উঠে এসেছে তা তাঁর কবিতার সংস্পর্শে না এলে বোঝা যাবে না। তাঁর  ‘ এল সালভাদর ’  শীর্ষক কবিতার কথাই ধরা যাক। এই অত্যুজ্জ্বল কবিতার মাত্র কয়টি বিস্ময়কর পংক্তিই শুধু এখানে তুলে ধরছি-    হণ্ডু...

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমো...