Skip to main content

ঊনিশ সালের জন্মদিনে মুক্তির জন্য লেখা

 শুভ জন্মদিন মুক্তি জহির

কাজী জহিরুল ইসলাম 



বাঙালিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বছর ১৯৭১। এ বছর সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি বাংলাদেশ আর বাংলাদেশ পেয়েছে সাড়ে সাত কোটি দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি। ভীতি এবং স্বপ্নের ভেতরে অঙ্কুরোদ্গম ঘটেছে একঝাঁক শিশুর। বাংলাদেশের সমান বয়েসী সেইসব শিশুরা আজ পৃথিবীর নানান ভূখণ্ডে ছড়িয়ে আছেপ্রতিভার উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করছে পৃথিবীকে। সেইসব শিশুদের একজন মুক্তি। ১৯৭১ সালের এইদিনে ১০ সেপ্টেম্বর মুক্তি জন্মগ্রহণ করে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে পড়তে পড়তেই আমার সাথে দেখা, পরিচয় এবং বিয়ে। এরপরে দেশে-বিদেশে পড়াশোনা, নানান প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রচনা করেছে এক অনিন্দ্য সুন্দর সংসার, যার পুরো কৃতিত্বই মুক্তির। মুক্তি যখন আমার পাশে থাকে নিজেকে মনে হয় রাজা, ও যখন দূরে থাকে তখন মনে হয় আমি বড় অসহায়। আমি অনেক ভালো বক্তাকে দেখেছি স্ত্রী উপস্থিত থাকলে আর কথা বলতে পারেন না। আমার বেলায় হয় তার উল্টো, মুক্তি উপস্থিত থাকলে আমার সাহস এবং স্বতস্ফূর্ততা দুই-ই থাকে তুঙ্গে। আমি তখন কথা বলি দ্বিধাহীন। হয়ত এজন্যই আমার এক গ্রন্থের উৎসর্গ পত্রে লিখেছি, মুক্তি, আমার সাহস

আজ আমার সাহসের জন্মদিন। আমি যেমন চাই সারাক্ষণ হাজারো মানুষ পরিবেষ্টিত হয়ে থাকি, কথা বলি, মত বিনিময় করি। মুক্তি এক্ষেত্রে কিছু ইন্ট্রোভার্ট, কিছুটা লাজুক। বিশেষ করে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকীর মত বিশেষ দিনগুলোতে ও চায় সময়টা কাটুক শুধু পরিবারের সাথে। তাই কাউকে বলিনি। কাল রাতে আমরা আমরাই কেক কেটে ওর জন্মদিন পালন করি।

তবে একেবারে যে আড়ম্বর ছিল না তা কিন্তু নয়। প্রতিদিন বারো ঘণ্টা কাজ করে অগ্নি, সপ্তাহে ছয় দিন। এর মধ্যে দিন, ক্ষণ মনে রেখে অগ্নি উপহার কিনে রেখেছে। কদিন আগে গেছি নভোর স্কুলের ষ্টেশনারি কিনতে, ও বিশেষ কিছু তুলে নিলো ঝুড়িতে। আমি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছি যাতে উল্টোপাল্টা কিছু না নেয়। যখনই বললাম, এটা কি নিলে? ও বলে, এটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, এটা আমি নিচ্ছি, আমি পে করবো। আমি বলি, কেন নিচ্ছো সেটা বলো, যুক্তিসঙ্গত হলে আমি টাকা দেব। ও বলে, বাবা, এটা নিয়ে তুমি একদম ভেবো না তো, এটার টাকা আমাকেই দিতে হবে, তোমার দিলে হবে না। নভো ওর জমানো খুচরা পয়সা একসঙ্গে করে মায়ের জন্য পছন্দের উপহার কিনে এনেছে, এবং প্রায় দুই সপ্তাহ তা খুব যত্নে লুকিয়ে রেখেছে।

মুক্তি আমাদের পরিবারের কেন্দ্র, ওকে ঘিরেই আবর্তিত হয় সবকিছু। সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় যখন মুক্তির আলয়ে ফিরি এবং এই ফেরার জন্য আমরা ব্যাকুল হয়ে থাকি। 

নভোর খুব বুদ্ধি। আমি সাধারণত অফিস থেকে ফিরে সোজা ডাইনিং টেবিলে বসে পড়ি। কাল গাড়ির চাবি নিয়ে ছুটছি দেখে ও এসে বলে, বাবা, কোথায় যাও? আমি কী যেতে পারি তোমার সাথে? নভোকে নিয়ে কেক এবং ফুল কিনে আনি।

আমাদের পাঁচজনের উৎসব। জল একজন অটিস্টিক শিশু। ও কোনো উপহার কিনে আনতে পারেনি কিন্তু মাকে চুমু খেয়ে বলেছে, হ্যাপি বার্থ ডে। নভো আর অগ্নি ওদের উপহার তুলে দিলো মায়ের হাতে। আমি আর কি দেব? একগুচ্ছ গোলাপ, যারা ফুটে আছে আমার হৃদয়ের লাল রঙ নিয়ে। 

সাধারণত এভাবেই আমরা মুক্তির জন্মদিন পালন করি। আবারও শুভ জন্মদিন।

 

হলিসউড, নিউ ইয়র্ক। ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Comments

Popular posts from this blog

শিল্পী কাজী রকিবের সাক্ষাৎকার

নন-একাডেমিক শিল্পীরাই নতুন কিছু দেয় -    কাজী রকিব  [কাজী রকিব বাংলাদেশের একজন গুণী শিল্পী। রাজশাহী আর্ট কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা-শিক্ষক। কলেজের প্রথম ক্লাসটি নেবার কৃতিত্বও তাঁর। নিরন্তর ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান ভাবনার ছবি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সস্ত্রীক বসবাস। তার স্ত্রী মাসুদা কাজীও একজন গুণী শিল্পী। বৈচিত্রপ্রিয় এই শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। ধারাবাহিকভাবে তা এখানে প্রকাশ করা হবে। আজ উপস্থাপন করা হলো প্রথম পর্ব।]   জহিরুলঃ  বেশিরভাগ শিল্পীই নিজের একটা স্টাইল তৈরি করেন ,  নিজস্বতা যাকে আমরা বলি। আবার কেউ কেউ একই ধরণের ছবি বারবার আঁকেন। আপনার কাজে বৈচিত্র খুব বেশি ,  এতে করে "টাইপড" অপবাদ থেকে আপনি মুক্ত কিন্তু নিজের একটি স্টাইল তৈরি করতে না পারা বা তৈরি হয়নি বলে কি আক্ষেপ হয় ,  নাকি এই যে ভার্সেটিলিটি এটাই আপনি বেশি উপভোগ করেন ?    রকিবঃ   আমি আসলে আলাদা করে ভাবিনি এই স্টাইল বিষয়ে। কারো মতো আঁকারও চেষ্টা করিনি তেমন ভাবে। অল্প বয়সে ,  আমার ১৯ / ২০ বছর বয়সে ,  সালভাদর দালির মতো আঁকতে চেষ্টা করেছিলাম কিছুদিন ।

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে এবং সংশোধনী প্রক্রিয়া কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। এখন পর্যন্ত স

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার - তৃতীয় পর্ব

মঞ্জু আমার ওপর রাগ করেছে                                                           - আল মাহমুদ [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের  তৃতীয় পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]  সাক্ষাৎকার নেবার এক পর্যায়ে আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু  ও কাজী জহিরুল ইসলাম। ওয়ান্টাগ পার্ক, নিউ ইয়র্ক।  ছবি তুলেছেন ড. মাহবুব হাসান।   জহিরুলঃ  খুশবন্ত সিং তার সকল বই অনুবাদ করার লিখিত অনুমতি দিলেন আপনাকে এবং সেই অনুমতিপত্রটি তিনি নিজ হাতে আপনার সামনেই বাংলায় লিখে দিলেন। তিনি কিভাবে বাংলা শিখলেন তা কি জানতে পেরেছিলেন ?  মঞ্জুঃ    জ্বি ,  ঘটনাটি  ঘটে  ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে ,  এ সম্পর্কে আমি আগের এক প্রশ্নে বলেছি। তারিখটি আমার স্মরণে নেই। তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর ,  ডিসেম্বরের শেষ দিকে। না ,  বাংলায় নয় ,  উনি ইংরেজিতে লিখেছেন। আমার কফি পানের সময়ের মধ্যেই লিখে দিয়েছেন। ১৯৮৪ থেকে মাঝে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে আমাকে তিনটি বা চারটি চিঠি লিখেছেন। লিখেছেন বলতে আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। প্রতিটি চিঠি ইংরেজিতেই লিখেছেন। প্রতিটি চিঠিতে আমাকে সম্বোধন করেছেন  “ আনোয়ার ভাই ,”  বলে।