Skip to main content

দুঃখকেও উপভোগ করা যায়

 জীবনের ছন্দ

|| কাজী জহিরুল ইসলাম ||  

 


জীবনকে উপভোগ্য করে তোলার কথা বললে অনেকেই ভাবেন ভোগ বিলাসের কথা বলছি। আসলে তা নয়। দুঃখকেও উপভোগ্য করে তোলা যায়আনন্দের উপলক্ষ করে তোলা যায়। শেষ কথাটি হচ্ছেআনন্দের মধ্যে বসবাস করা। সারাক্ষণ মনের জগতে একটি ভালোলাগা বোধ ধরে রাখতে পারলে মনের স্বাস্থ্য ভালো থাকে বলে আমার ধারণা। আমি যখন স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ছবি অবয়বপত্রে প্রকাশ করিমুক্তির সঙ্গে বা আমার পুত্র-কন্যাদের সঙ্গে আনন্দের ছবি প্রকাশ করিএর একটি উদ্দেশ্য থাকে। আমি চাই আমার আনন্দ অন্যদের মধ্যে প্রবাহিত হোকঅন্যরাও আনন্দে থাকার বা থাকতে পারার তাগিদ অনুভব করুক। কারো কারো দীর্ঘশ্বাসের শব্দ আমি পাই। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল বলেই আনন্দে মেতে থাকতে পারছি। তারা মনে করেন আনন্দের মূল শক্তিই অর্থবিত্ত। আমি তা একেবারেই নাকচ করে দিই। আজ আমার স্বচ্ছলতা আছে বটে কিন্তু আমিও একদিন বিত্তহীন ছিলামকপর্দকশূন্য অবস্থায় বিবাহিত জীবন শুরু করেছিলাম। তখনও এর চেয়ে একটুও কম আনন্দে ছিলাম না।

যাই হোক যে কথা বলার জন্য আজকের এই লেখা তা হচ্ছে আমাদের আনন্দের অনুষঙ্গগুলোর কিছু তুলে ধরা। কর্মদিবসগুলো অনেকের খুব নিরানন্দ কাটে। আমাদের তা হয় না। আমি এবং আমার স্ত্রী দুজনেই কাজটাকে দারুণ উপভোগ করি। যখন যে কাজের দায়িত্ব নিই বা পাই তা গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে করি এবং কাজের ভেতরেই আনন্দে থাকি। তাই দিনের শেষে ক্লান্তিটাও তেমন অনুভূত হয় না। বাড়ি ফিরে সোজা খাওয়ার টেবিলে। নৈশভোজের পর আমি এক খিলি পান খেতে খুব পছন্দ করিমুক্তিও করতকিন্তু দাঁত ও সৌন্দর্যের বিবেচনায় তেমন তাম্বুলরসিক হয়ে উঠতে পারেনি। আমি কিন্তু পুরোদস্তুর তাম্বুল্মৃতসুধা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করি। যারা তাম্বুলরসিক হয়ে উঠতে চান তাদের জন্য বলিমচমচে পানের ওপর চুন-সুপারির সাথে একটু মিষ্টি পান মশলা এবং পরিমান মত সুগন্ধী জর্দা নেবেন। পানটা চিবিয়ে প্রথম পিকটা ফেলে দেবেনওটা বিষ। আবার চিবিয়ে দ্বিতীয় পিকটাও ফেলে দেবেনওটা অম্বল। এরপর চিবিয়ে চিবিয়ে তাম্বুলরস পান করতে থাকুনওটা অমৃত। 

মুখে পান আর হাতে এক কাপ সবুজ চা নিয়ে ওপর তলায় উঠে যাই। চা খেতে খেতে বিছানায় শুয়ে প্রিয় কোনো সিনেমা দেখা আমাদের একটি রোজকার বিনোদন। শুধু যে এই মুহূর্তটির জন্য সারাদিন অপেক্ষা করি তা-ই নয়আসলে প্রতিটি ঘটনামুহূর্তই কোনো না কোনোভাবে জীবনকে আন্দোলিত করেভরিয়ে তোলে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের ভেতরেই বেঁচে থাকিবেঁচে থাকার চেষ্টা করি।

গতকাল যে সিনেমাটি দেখেছি তার কথা বলি। সিনেমার নাম সাফ্রাজেট। ব্রিটিশ সিনেমা। ইংলিশ শ্রমজীবী নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলন এই ছবির মূল গল্প। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই আন্দোলন শুরু করে ধোপাখানার কিছু নারী শ্রমিক। শারীরিকমানসিক নির্যাতন ছাড়াও তাদেরকে বারবার কারাবন্দী হতে হয়। জেলখানায়ও তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়। ওদের শান্তিপূর্ণ মিছিলপ্রতিবাদ সভায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানালা ভাঙেপোস্টবক্স বোম মেরে উড়িয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় চরিত্র মৌদ এক পর্যায়ে বলেনযখন ওরা ধ্বংস ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বোঝে না তখন ধ্বংসের পথ বেছে নেয়া ছাড়া আর উপায় কীশেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ নারীরা তাদের ভোটাধিকার অর্জন করতে সক্ষম হন। প্রথমে ত্রিশোর্ধ নারীকেতারপর সকল নারীকে ভোটাধিকার দেয় ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। ১৯১৮ সালে ব্রিটেন১৯১৯ সালে নেদারল্যান্ড এবং ১৯২০ সালে আমেরিকা নারীদের ভোটাধিকার প্রদান করে।

পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য দেশের নারীরা ভোটাধিকার পেয়েছে মাত্র ১০০ বছর আগে। এরই মধ্যে জ্ঞানবিজ্ঞানশিক্ষাসংস্কৃতিরাজনীতিসকল ক্ষেত্রেই শিখর ছুঁয়েছে নারী। তবুওআজওনারীর প্রতি পৃথিবীর মানুষের সেই পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি সর্বত্রই দেখা যায়। 

যারা মানুষের এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য কাজ করছেন তারা এই ছবিটি দেখে নিতে পারেন। এই অসাধারণ ছবিটি নির্মাণের জন্য আমি বৃটিশ পরিচালক সারাহ গ্যাভরনকে ধন্যবাদ জানাই। 

 

হলিসউডনিউইয়র্ক। ২৬ নভেম্বর ২০১৯

Comments

Popular posts from this blog

অসাধারণ এই শিল্পীর জীবনের গল্প বড় করুণ

  [এই সময়ের অত্যন্ত প্রতিভাবান শিল্পী সারফুদ্দিন আহমেদ। বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে। আর্ট কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেন ,  আর শুধু ছবি আঁকেন। নানান মাধ্যমে ,  নানান বিষয়ের ছবি। সারফুদ্দিন আহমেদের ছবি থেকে চোখ ফেরানো যায় না ,  আপনাতেই ওঁর নান্দনিক সৃষ্টিকর্মে দৃষ্টি আটকে যায় ,  কী জল রঙ ,  কী অ্যাক্রিলিক ,  কিংবা স্রেফ পেন্সিলের ড্রয়িং। এই গুণী শিল্পীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম। সাক্ষাৎকারটি এখানে উপস্থাপন করা হলো।]       ভারত আমাকে চোখ দিয়েছে ,  বাংলাদেশ দিয়েছে দৃষ্টি -     সারফুদ্দিন আহমেদ     কাজী জহিরুল ইসলামঃ  ব্যাক গ্রাউন্ডে তবলা বাজছে আপনি ছবি আঁকছেন কাচের ওপর।    এই যে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ছবি আঁকা, এই ছন্দটা ছবিতে কিভাবে ধরেন? আর কোনো শিল্পী ছবি  আঁ কার সময় যন্ত্রানুসঙ্গ ব্যবহার করেছেন?   সারফুদ্দিন আহমেদঃ   কাঁচ নয়,   এটি এক বিশেষ ধরনের কাপড়-নেট। এই নেটের উপরে বর্তমানে আমার এক্সপেরিমেন্ট চলছে।    জহিরুলঃ ও ,  ফেইসবুকে যখন ছবিটি দেখি কাচের মতো ...

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা || আবুল কাইয়ুম

কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতা: জাতীয়-বৈশ্বিক মেলবন্ধন   || আবুল কাইয়ুম ||    কবি যদি হন বিশ্বপরিব্রাজক ,  তবে তিনি তো কবিতায় আঁকবেন তাঁর দেখা দুনিয়ার ছবি। বৃহত্ত্বকে আশ্লেষ করার পরিণামে স্বাভাবিকভাবে তাঁর মধ্যে জন্ম নেবে মানবিক মহত্ত্ববোধ ,  তা যে কাব্যাদর্শের লাঠিতে ভর করেই হোক। আশির দশক থেকে ক্রমবিকশিত কবি কাজী জহিরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি । পর্যাপ্ত বিশ্বভ্রমণের অভিজ্ঞতায় আলোকিত হয়েছেন বলেই তিনি যে কোনো সঙ্কীর্ণতার উর্ধ্বে থেকে নিজেকে উদারনৈতিক মানবিক চৈতন্যে সংগঠিত করতে পেরেছেন ,  বিশ্বমানবতা ও বিশ্বশান্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত রেখেছেন। তাঁর ব্যক্তিত্বে জড়ো হয়েছে বৃহত্তর সমষ্টিচেতনা ,  তাঁর প্রেম ও প্রার্থনা মানব কল্যাণের আশ্রয়ে গড়ে উঠেছে। তার লেখনীতে নানা দেশের মানুষের জীবন ,  সংস্কৃতি ,  প্রেম ,  ত্যাগ ও সংগ্রামের চালচিত্র কীভাবে উঠে এসেছে তা তাঁর কবিতার সংস্পর্শে না এলে বোঝা যাবে না। তাঁর  ‘ এল সালভাদর ’  শীর্ষক কবিতার কথাই ধরা যাক। এই অত্যুজ্জ্বল কবিতার মাত্র কয়টি বিস্ময়কর পংক্তিই শুধু এখানে তুলে ধরছি-    হণ্ডু...

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকার || পর্ব ৭

মতিউর রহমান চৌধুরীকে  র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য নমিনেট করেছিলেন  আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু       [লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর সাক্ষাৎকারের সপ্তম  পর্ব আজ প্রকাশ করা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কবি কাজী জহিরুল ইসলাম।]          জহিরুলঃ  আপনার সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করেছেন জাতীয় সংসদ কভার করে। এই সংসদে আমাদের সংবিধানের অনেকগুলো সংশোধনী পাশ হয়েছে। আমাদের নেতারা সব সময় বলেন, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু প্রকৃত চিত্র হচ্ছে দেশের চেয়ে দলের স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে এবং দলের চেয়ে ব্যক্তির/পরিবারের স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধান প্রধান সংশোধনীগুলোর আলোকে যদি বিশ্লেষণ করেন কতোটা জাতীয় স্বার্থে আর কতটা ব্যক্তি বা পরিবারের স্বার্থে এইসব সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।    মঞ্জুঃ   আপনি ঠিকই বলেছেন, এযাবত বাংলাদেশে ১১টি জাতীয় সংসদ গঠিত হয়েছে এবং এর মধ্যে দ্বিতীয় সংসদ থেকে নবম সংসদ পর্যন্ত মোট আটটি সংসদের অধিবেশন কভার করা সুযোগ হয়েছে আমার। আমার সংসদ কভারের সময়ে আমাদের সংবিধানের ১০টি সংশোধনী অনুমো...