নির্জনচারী কবি পার্থ সারথি বসু
|| অয়ন ঘোষ ||
সত্তরের দশকের বিশিষ্ট কবি পার্থসারথি বসুর সাথে আমার আলাপ এই সামাজিক মাধ্যমেই আর নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে "কফি ও কবিতা" নামক ভার্চুয়াল গ্রুপে। করোনা উত্তর পৃথিবীতে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের মতো বাঁচার অবসর খুঁজে নিয়েছি এই ভার্চুয়াল পৃথিবীতে। "কফি ও কবিতা" আমার কাছে তেমনই একটি বাতায়ন যেখানে মননের মানুষদের সাথে, মেধার মানুষদের সাথে মন খুলে গড়ে তোলা সম্ভব অক্ষর-আত্মীয়তা। কাজী জহিরুল ইসলাম-এর অনবদ্য সঞ্চালনায় মানুষের মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে প্রাচ্য-প্ৰতীচ্যের এই মেল বন্ধন। আমরাও সময় সুযোগ পেলে সেই খোলা বারন্দায় গিয়ে বসি যে যার কফি মগ হাতে কিন্তু শর্ত একটাই কবিতার ভাগ সবাইকে দিতে হবে। এই গ্রুপে একদিন হই হই করে এলেন পার্থসারথি বসু। তার আগে প্যারিসের জানালা বলে আরো একটি গ্রুপে তাকে দেখলেও তাঁর কবিতার সাথে পরিচিত ছিল আমার।
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় তাঁর লেখা অন্য অনেকের মধ্যে চোখ টেনে নিয়েছে স্বকীয় কাব্যগুনে। গ্রামের দিকে থাকি তাই প্রতিষ্ঠিত সিনিয়র কবিদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলাপ সে অর্থে নেই, যে'টুকু আলাপ তা তাঁদের কবিতার চরণ ধরে। পার্থসারথি বসুর সঙ্গে সেই আলাপই ছিল। তারপর কফি ও কবিতায় তাঁকে নতুন করে দেখলাম, জানার সুযোগ হলো বেশি করে কারণ এই গ্রুপে পার্থ দা সিনিয়র মোস্ট হলেও আমাদের থেকে অনেক বেশি অ্যাকটিভ ছিলেন, খুব মাতিয়ে রাখতেন। প্রচুর কবিতা দিতেন এবং বেশিরভাগ কবিতাই খুব মননের ও উঁচু দরের। তারপর তাঁকে যতটা বুঝলাম, তা হলো তিনি ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন নিপুণ পাঠক, স্রষ্টা ও শিক্ষক, বিশেষ করে বানানরীতি ও ছন্দ নিয়ে তার পড়াশোনা ও বোধ ছিল অসীম।
তাঁর আর একটা মস্ত গুন ছিল, তা হলো বাংলা ভাষার একটুও অনাদর তিনি সহ্য করতে পারতেন না এবং এই ভাষার যথাযথ মানচিত্র সম্পর্কে তাঁর ধারণা আমাকে ও আমাদের অনেককেই বিস্মিত করেছে। কফি ও কবিতায় আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলি। তেমনই একটি বিষয় "লেখকের ভৌগলিক অবস্থান" নিয়ে একটি আলোচনায় তাঁকে সহ-আলোচক হিসেবে পেয়েছিলাম এবং তাঁর পরিশীলিত ও সরস আলোচনা বরাবরের মতো মুগ্ধ করেছিল আমাদের। এই করোনাকালে আমরা অনেক গুণী মানুষকে হারিয়েছি। পার্থদাও ছেড়ে চলে গেলেন আমাদের। তাঁর আক্রান্ত হবার খবর তিনি নিজেই দিয়েছিলেন গ্রুপে। এতো পজিটিভ মানুষ ছিলেন কখনো মনে হয়নি যে ফিরবেন না। কিন্তু সবাইকে মাতিয়ে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। আমি বিশ্বাস করি কবির মৃত্যু নেই। তাঁর অক্ষর গান নিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মাঝে আর নিশ্চিত জানি যেখানেই থাকবেন ছন্দে থাকবেন, ছন্দে রাখবেন সেই পৃথিবী। ভালো থাকবেন পার্থদা। প্রণাম।

পার্থদার অকাল প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই শূন্যতা অপূরণীয়। ওপারে ভালো থাকুন পার্থ দা।
ReplyDelete